পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার গ্রহণযোগ্য নয়: শিক্ষামন্ত্রী
সরকারের নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তক না পড়েই মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার গ্রহণযোগ্য নয়। তবে যুক্তিযুক্ত ভুল কেউ ধরিয়ে দিলে সংশোধন করা হচ্ছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ৯৬ জনকে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, অগ্রণী ব্যাংক; ৫ জনকে ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ স্বর্ণপদক ও ২ জনকে ডা. এ কে খান স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা রূপান্তরের জন্য তাঁরা কাজ করছেন। এটি গত বছর শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা, বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থা, কিছুটা বিদ্যুতের সংকট, কাগজের সংকট, কালির সংকট—এসব কারণে গত বছর এটা করা সম্ভব হয়নি। সব সংকট পেরিয়ে এ বছর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণিতে ও মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বইগুলো তাঁরা দিতে পেরেছেন।
মাধ্যমিকের বই নিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘মাধ্যমিকে দুই শ্রেণির মোট ২৬টি বই। এক বছরে নতুন করে ২৬টি বই তৈরি করা কষ্টকর। কিন্তু আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। সেটি করতে গিয়ে কোথাও কোথাও ভুল হতে পারে, কোথাও কোথাও হয়েছে। সেগুলো যখনই চিহ্নিত হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করা হচ্ছে। একটা বিষয় হলো এবার খুব মনোযোগ দিয়ে বইগুলো পড়ছে মানুষ। প্রথম দিকে নবম-দশম শ্রেণির বইগুলোতে ভুল ধরা পড়ে। ১০ বছর ধরে ভুলগুলো রয়ে গেছিল। কিন্তু কেউ কথা বলেনি। সেগুলোর ভুল চিহ্নিত হওয়ার পর আমরা সংশোধন করে দিয়েছি।’
নতুন পাঠ্যপুস্তকের বইগুলোর ভুলত্রুটির বিষয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন বইগুলো নিয়ে যে কথা উঠেছে, যা যা ভুল আছে, তার বিষয়ে দুটি কমিটি হয়েছে। যুক্তিযুক্ত ভুল ধরিয়ে দিলে বিশেষজ্ঞ কমিটি তা বিবেচনায় নেবে। যে ভুলগুলো হয়েছে, তাতে ইচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে কি না, কোনো গাফিলতি ছিল না কি না, এ বিষয়ে আরেকটি কমিটি হয়েছে। এতে প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অনেক কথা ধর্মীয় বিভিন্ন বক্তাদের মুখে শোনা যাচ্ছে। ফ্যাক্ট চেক করে দেখা যাচ্ছে, যা বলা হচ্ছে সেগুলো বইতে নেই, কিন্তু এই বক্তারা বলেই চলেছেন। বরং বইতে উল্টো রয়েছে। ডারউইন নিজেও বলেননি যে বানর থেকে মানুষ হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকেও তা নেই। পাঠ্যপুস্তকে এক জায়গায় শিক্ষার্থী প্রশ্ন করছেন, বানর থেকে মানুষ হয়েছে কি না, এর জবাবে বলা হচ্ছে এই ধারণাটা ভুল। বানর থেকে মানুষ হয়নি। কিন্তু ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে বানর থেকে মানুষ হয়েছে। আরও বলা হচ্ছে তাঁরা সমকামিতাকে উসকে দিচ্ছেন, পর্দাপ্রথাকে কটাক্ষ করেছেন, হিন্দুত্ববাদ-পৌত্তলিকতাকে উসকে দিচ্ছেন, মুসলিম ইতিহাসকে হেয় করেছেন, হিন্দু বা বৌদ্ধ শাসনকে বড় করে দেখাচ্ছেন—এ রকম বহু কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এগুলোর একটিও সত্য নয়।
সমালোচকেরা কেবল ছোট ছোট ভুল ধরা নিয়েই ব্যস্ত উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘আমরা উন্নত শিক্ষা কার্যক্রমে প্রায় ষোলো আনা এগিয়ে গেছি। কিন্তু সমালোচকেরা সেটা বাদ দিয়ে ছোট ভুলগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তি ছড়ায়। আমাদের পঠনপাঠন ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে, সেটা নিয়ে তাদের কোনো কথা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভোগান্তি কমানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ভর্তির ক্ষেত্রে অযথা ভোগান্তি দূর করতে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হয়েছে। সেটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমাদের আগামীর হাতছানি বিচারের সবকিছুই আজকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে। যাঁরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ থাকবে, অবশ্যই বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সে উন্নয়নে আপনারা পাশে থাকবেন। কারণ, এরই মধ্যে বাঙালি জাতির শান্তি ও মুক্তি।’
অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফেরদৌস আক্তার ও নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুমনা সরকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুরশেদুল কবীর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।
এদিকে দুপুরের পর শিক্ষামন্ত্রী রাজশাহীতে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান অডিটরিয়ামে রাজশাহী বিভাগের কলেজ অধ্যক্ষদের সঙ্গে ‘শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন’ বিষয়ক এক কর্মশালা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।