সরকারি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর

কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে সরকারি পাহাড় কেটে মাটির রমরমা বাণিজ্য চললেও নীরব প্রশাসন
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে ১০ একর সরকারি পাহাড় কেটে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট মাটি বিক্রির সত্যতা পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গত এক বছরে একাধিক সরকারি পাহাড় কেটে ডাম্পার ট্রাকের মাধ্যমে মাটি বিক্রি করেন ২৩ জনের স্থানীয় সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। এসব মাটির বাজারমূল্য (প্রতি ঘনফুট ৫০ টাকা ধরে) ৭৫ কোটি টাকা।

গত মাসে প্রথম আলোয় ‘সরকারি পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি বিচারকের নজরে আসে। গত ১১ আগস্ট ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন পরিবেশ আদালত কক্সবাজারের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম।

পিএমখালীতে সংরক্ষিত পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত, পাহাড়ে কী পরিমাণ মাটি কাটা অথবা বিক্রি হয়েছে, তা নিরূপণ করে পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন পরিবেশ আদালত। এ বিষয়ে ২৫ আগস্টের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার উপপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন সঠিক। পাহাড় কাটা ও বালু ব্যবসার সঙ্গে কতজন জড়িত, কত মাটি বিক্রি হয়েছে এবং কত একর পাহাড় কাটা হয়েছে; সব তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার পরিবেশ অধিদপ্তরে পাহাড়খেকোদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখানে মাটি বিক্রির হিসাব নিরূপণসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শুনানি নিয়ে মামলা করা হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে পাহাড় কাটায় জড়িত ২৩ জনের মধ্যে বেশির ভাগ পরিবেশ ও বন আইনের একাধিক মামলার আসামি বলে উল্লেখ করা হয়। তাঁরা সিন্ডিকেট করে পিএমখালী ইউনিয়নের তাজমহলের ঘোনা, ঘোনারপাড়া, ছনখোলা ও পশ্চিম পাড়া এলাকায় ১০ একরের পাহাড় কেটে ডাম্পার ট্রাকবোঝাই করে বালু-মাটি বিক্রি করে আসছেন এক বছর ধরে।

আরও পড়ুন

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম, বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বার, বিট কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন স্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার জায়গার পরিমাপ এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করেন।

২৩ অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন—পিএমখালীর ওবায়দুল করিম, কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার নাছির উদ্দীন রুনো, খুরুশকুল তেতৈয়ার হেলাল উদ্দিন, পিএমখালীর আবদুল্লাহ, মাহমুদুল করিম, মো. মামুন, জাহাঙ্গীর আলম, মো. জোসেফ, তাজমহল, কায়েস সিকদার, রামুর খুনিয়াপালংয়ের নুরুল কবির বাবুল, পিএমখালীর লুৎফুর রহমান, সোনা আলী, মো. কাজল, মনিরুল ইসলাম মুন্না, খুরুশকুলের নাছির উদ্দিন, পিএমখালীর মো. সোহেল, মো. সিরাজ, শাহজাহান, মো. হারুন, মোস্তাক আহমদ, নুরুল আমিন ও আবদুল কাদের।

পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’–এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় এক বছর ধরে ১টি এলাকাতেই ১০ একরের বেশি সরকারি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি চলেছে।