‘তথ্য বোর্ডে’ নেই হালনাগাদ তথ্য

রাজশাহীতে এসব বোর্ডের কোথাও লেখা আছে দুই বছর আগের তথ্য, কোথাও এক বছর আগের। কোথাও কোনো তথ্য লেখাই হয়নি।

কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য সারা দেশের মতো ২০১৭ সালে রাজশাহীর ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে তথ্য বোর্ড দেওয়া হয়। এ বোর্ডে ছয় দিনের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগ হালনাগাদ করার পদ্ধতি রয়েছে। বর্তমানে একটি ইউনিয়নেও এই বোর্ডে তথ্য হালনাগাদ করা নেই। কোথাও লেখা আছে দুই বছর আগের তথ্য, কোথাও এক বছর আগের। কোথাও কোনো তথ্য লেখাই হয়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের নাম ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প’। ২০১৭ সালে এই প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে এই বোর্ড লাগানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে দুই দফায় ২ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এই তথ্য হালনাগাদ করার কথা রয়েছে। বোর্ডে গত তিন দিন ও আগামী তিন দিনের তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

সম্প্রতি চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গিয়ে দেখা যায়, আবহাওয়াভিত্তিক কৃষিবার্তার জায়গায় লেখা রয়েছে ২০২০ সালের ১৮ থেকে ২০ অক্টোবরের তথ্য। বোর্ডের অর্ধেক অংশে হাতে লেখার ব্যবস্থা। আর বাকি অংশের লেখা ওঠে বোর্ডের পেছনে লাগানো চাকা ঘুরিয়ে। সেই তথ্য আর পাশে হাতে লেখা তথ্যের কোনো মিল নেই। বোর্ডের ভেতরে দেখা গেল খড়কুটো জমে রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ উপস্থিত ছিলেন না। একজন কর্মচারী ছিলেন। তিনি বলেন, উন্মুক্ত বোর্ড হওয়ার কারণে শিশুরা এসে চাকা ঘুরিয়ে দেয়। লেখা মুছে দেয়। কৃষি বিভাগের কর্মচারীদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রতিদিনই আসেন, কিন্তু তথ্য বোর্ড হালনাগাদ করেন না।

কথামতো কৃষি বিভাগের কর্মচারীদের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সেটি বন্ধ রয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মচারী বলেন, তাঁরা একটা সভায় রয়েছেন।

বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, ২০২১ সালের তিন দিনের তথ্য লেখা রয়েছে। পাশে আরেক দিনের তথ্য রয়েছে। সেটা পড়া যায় না। তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বোর্ডে কোনো তথ্যই লেখা নেই। ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন্নবী চৌধুরী বলেন, তাঁর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১ মাস হচ্ছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে এক দিনও কেউ হালনাগাদ করেননি। আগের চেয়ারম্যানের সময় এই বোর্ড দিয়ে গেছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, তিনি প্রতিদিন আবহাওয়ার তথ্য হালনাগাদ করতেন। কিন্তু উন্মুক্ত বোর্ড হওয়ার কারণে শিশুরা কলম দিয়ে লেখা তথ্য মুছে ফেলে, আবার চাকা ঘুরিয়ে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পরিমাণ এলোমেলো করে দেয়। এ জন্য তিনি আর বোর্ডের তথ্য হালনাগাদ না করে সব কৃষকের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁদের মুঠোফোনে তথ্য দিয়ে থাকেন। স্বয়ংক্রিয় উপায়ে বোর্ডের তথ্য হালনাগাদ করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক শাহ কামাল বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এই তথ্য হালনাগাদ করার কথা। স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য হালনাগাদ করার জন্য নতুন প্রকল্পের কাজ চলছে। নতুন প্রকল্প অনুমোদন হলে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতেও কাজ হবে।