ভরা মৌসুমে মেঘনায় ইলিশের দেখা নেই, খরচ উঠছে না জেলেদের

ভোলার মেঘনা নদীতে বছরের এই সময়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে; কিন্তু এবার খুব কম ইলিশ ধরা পড়ছে। আবার ধরা পড়া ইলিশের আকারও ছোট।

ভোলার মেঘনা নদীতে ইলিশ কম ধরা পড়েছে। এতে আড়ত ও মাছের বাজারে ইলিশ দেখা যাচ্ছে না। গত মঙ্গলবার ভোলার তুলাতুলি মাছঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

ভরা মৌসুমে মেঘনা নদীতে ইলিশ নেই বললেই চলে। যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে, তা দিয়ে জেলেদের খরচই উঠছে না। মাছঘাটে নেই জেলে, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভিড়। এই মৌসুমে নদীতে আশানুরূপ ইলিশ না পড়ার কারণ সম্পর্কে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে ইলিশের পেটে ডিম আসেনি। তাই নদীতে ইলিশ উঠছে না। 

গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভোলার সদর উপজেলার তুলাতুলি মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, আড়তের দালাল, কর্মচারী ও আড়তদার বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছে। কেউ অলস বসে চা পান করছে, আর নদীর দিকে চেয়ে আছে। নদীতে মাছ পড়লে স্বাভাবিক সময়ে ২০-২৫টি মাছ বিক্রি করতে আসা নৌকা ঘাটে নোঙর করা থাকলেও মঙ্গলবার মাত্র দুটি নৌকা দেখা যায়। ঘাটের রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকানেও ভিড় নেই।

মেঘনায় ইলিশ আহরণের পরিমাণ কমছে

গত সোমবার ভোলার দৌলতখান উপজেলার মাঝিরহাট মাছঘাটে একই সময়ে কোনো আড়তদার কিংবা জেলেকে পাওয়া যায়নি। সবাই জানান, নদীতে মাছ নেই, তাই জেলেরা সাগরের দিকে ছুটছেন। 

 মেঘনার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে দৌলতখান মাঝিরহাটের মো. সিদ্দিকুর রহমান মাঝি (৬৫) এখন বসত করেছেন ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর শান্তিরহাট এলাকায়। প্রতিদিন তিনি তাঁর ছোট ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারে বের হন। সঙ্গে নেন তিন জেলেকে; কিন্তু ভরা মৌসুমেও তাঁর জালে মাছের দেখা মিলছে না। মঙ্গলবার পেয়েছেন সাতটি জাটকা। বিক্রি করেননি। বাড়ি নিয়ে গেছেন। আগের দিন সোমবারেও তাই। দুই হালি (৮টি) জাটকা পেয়েছেন। বিক্রি করলে ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন; কিন্তু করেননি। বাড়িতে নিয়ে গেছেন। তবে দুই দিন আগে রোববারে সারা দিনে সাড়ে তিন হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছিলেন। সেদিনও বাড়িতে খোরাকির জন্য একটি বড় মাছ নিয়ে গিয়েছিলেন। 

সিদ্দিক মাঝি  বলেন, ‘দায়-দেনা হেরুম নাই, নগদ টাকায় জমি লগ্নি লোই গিরস্তি করি। আউশ, আমন, বোরো, কোনোডাই বাদ দেই না। আল্লায় হেই উছিলায় সংসার চালায়। নদীর ওরপে বরষা কোইল্লে, না খাই থায়োন লাইগদো।’ 

তুলাতুলি মাছঘাটের আড়তদার হাজি মো. আবু তাহের বলেন, তাঁর দাদনভুক্ত জেলে শতাধিক। এর মধ্যে মঙ্গলবার ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মাত্র ৯ জন জেলে মাছ বিক্রি করতে এসেছেন। তাঁরা সবাই মেঘনার জেলে। এই ৯ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ মাছ বিক্রি করেছেন ৫ হাজার ২৮০ টাকার। সবচেয়ে কম বিক্রি করেছেন ৬৭০ টাকার। এসব বিক্রেতার নৌকায় ৬ থেকে ১০ জন করে অংশীদার আছেন। যাঁদের ওই টাকার সমান ভাগ দিতে হবে। 

জেলেরা জানান, মাছ কম বেশি যা–ই বিক্রি হোক, সব টাকা একজনে পান না। জাল-নৌকা, মাঝি-মালিক ভাগী সবার জন্য সমান ভাগ হয়। ভাগের ভাগ নিয়ে খরচের টাকা থাকে না।