শেষ মুহূর্তে উন্নয়নকাজের হিড়িক 

নতুন প্রকল্পের আওতায় আগের নালা ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। এখন সড়কগুলোও উঁচু করে তৈরি করা হচ্ছে।

খুলনা সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কের পাশের ড্রেন নির্মাণের কাজ ধীরগতিতে চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নির্মাণসামগ্রী সড়কের ওপর ফেলে রাখায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ১১ মে নগরের পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকায়
। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা নগরের গল্লামারী এলাকার আলকাতরা মিল মোড় থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে একটি সড়ক। এলাকাটি সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। পুরো সড়কের দুই পাশে বেশ উঁচু ও বড় করে চলছে নালা নির্মাণের কাজ। ওই সড়কের কিছু দূর গেলেই ক্লাব মোড়। ক্লাব মোড় থেকে পশ্চিম দিকের সড়কেও একইভাবে কাজ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। সড়কের বিভিন্ন জায়গাজুড়ে রাখা নির্মাণসামগ্রী। এতে সড়ক আরও সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।

সরেজমিন ৮ ও ৯ মে এই চিত্র দেখা গেছে। এলাকাবাসী জানান, প্রায় চার বছর আগে ওই সড়ক, দুই পাশের নালা ও সড়কের কালভার্ট নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় এক ফুট উঁচু করে তৈরি করা হয়েছিল সড়কও। দুই বছর আগে আবার নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। নতুন প্রকল্পের আওতায় আগের নালা ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। আগের নালা তৈরি করে ওপরে কোনো স্ল্যাব বা ঢাকনা না দিয়েই ফেলে রাখা হয়েছিল প্রায় দেড় বছর। গত ঈদের পর থেকে আবার নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে।

বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনেক ঠিকাদারের একবারে বেশি কাজ করার সামর্থ্য নেই। এ কারণেই হয়তো নালা নির্মাণের কাজে ধীরগতি দেখা গেছে। ঠিকাদারকে চাপ দিয়ে বৃষ্টির আগে খোয়া বিছানোর কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে।
গোলাম মাওলা, কাউন্সিলর, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড

বাসিন্দারা বলেন, নতুন নালার কাজ করতে গিয়ে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না ঠিকাদার ও শ্রমিকেরা। দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

শুধু ওই সড়ক নয়, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি সড়কেই চলছে এমন কাজ। কোথাও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে, আবার কোথাও চলছে সড়ক সংস্কারকাজ। নাজিরঘাট এলাকার বেশির ভাগ সড়কে নতুন করে ইটের খোয়া ও বালু ফেলে রাখা হয়েছে।

এলাকাবাসী বলছেন, দীর্ঘদিন ফেলে রাখার পর হঠাৎ করেই যেন কাজ শেষ করার তাড়া শুরু হয়েছে। আগে কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে ধীরে ধীরে কাজ করা হলেও নির্বাচনের আগে আগে বেশি শ্রমিক দিয়ে কাজ উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে কাজের মান ভালো হচ্ছে না। অধিকাংশ সড়কে ব্যবহার করা ইটের খোয়ার মান খুব বেশি ভালো নয়।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডের লোকসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। ভোটার রয়েছে ২০ হাজারের মতো। ওই ওয়ার্ডের দক্ষিণে শের-এ-বাংলা সড়ক, উত্তরে হাজী ইসমাইল রোড, পশ্চিমে ও উত্তরে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড।

২৬ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে ও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় এই ওয়ার্ডে নাগরিক সেবার মান ভালো। পুরো ওয়ার্ড সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। শুষ্ক মৌসুমে ওয়ার্ডের মানুষের খাওয়ার পানির সমস্যা ছিল। গত দুই বছরে ওয়ার্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাম্প স্থাপন করে দিয়েছেন কাউন্সিলর। তবে মশার উপদ্রব বেশি। মশা নিধনে খুব বেশি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

গত বছরও ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। এখন সড়কগুলো উঁচু করে তৈরি করা হচ্ছে। ওই কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা আর থাকবে না বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. গোলাম মাওলা। তিনি ২০ বছর ধরে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে আছেন। প্রতিটি নির্বাচনই স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন তিনি।

জানতে চাইলে মো. গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, পুরো নগরেই উন্নয়নকাজ চলছে। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনেক ঠিকাদারের একবারে বেশি কাজ করার সামর্থ্য নেই। এ কারণেই হয়তো নালা নির্মাণের কাজে ধীরগতি দেখা গেছে। অন্যদিকে বৃষ্টির আগে যদি সড়কে ইটের খোয়া বিছানোর কাজ শেষ করা যায়, তাহলে ওই বৃষ্টির পানিতে সড়কটি আরও বেশি মজবুত হবে। এ কারণেই ঠিকাদারকে চাপ দিয়ে বৃষ্টির আগে খোয়া বিছানোর কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে।

গোলাম মাওলা বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। এ কারণে যখন এলাকাবাসীর যা প্রয়োজন, তা নিজের খরচে হলেও করার চেষ্টা করেছি। আগামী দিনে ওয়ার্ডের মানুষের সাঁতার শেখার জন্য একটি পুকুর অধিগ্রহণ ও খেলার জন্য একটি মাঠ করার পরিকল্পনা আছে।’

২৫ নম্বর ওয়ার্ডেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, তাঁদের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। বর্ষা মৌসুম এলেই ওয়ার্ডের কিছু কিছু সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে সর্বোচ্চ দুই দিনের মধ্যেই তা নেমে যায়। ওয়ার্ডের প্রধান সড়কগুলো অনেকটা ভাঙাচোরা। সড়কের দুই ধারে নতুন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ চলতে দেখা গেছে।

ওই ওয়ার্ডের শতরূপা মোড় এলাকায় দেখা যায়, সড়কের একপাশে নালা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অন্য পাশে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। সড়কের প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে ড্রেনের পচা মাটি ও ইট তুলে রাখা হয়েছে। চলাচলে যে মানুষের সমস্যা হচ্ছে, সেটিকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। একই অবস্থা দেখা গেছে আরও অন্তত চারটি জায়গায়।

 এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নালা নির্মাণের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে মশা ও মাদকের প্রভাব ব্যাপক। সিটি করপোরেশন থেকে সপ্তাহে একবার মশকনিধনে ফগার ব্যবহার করে গেলেও তাতে খুব বেশি কাজ হয় না। তাঁদের অভিযোগ, নালা নির্মাণের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। ওই কাজের নির্মাণসামগ্রীসহ অন্যান্য মালামাল রাখা হয় সড়কের ওপর। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডটির লোকসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। ভোটার ২২ হাজারের মতো। এ ওয়ার্ডের উত্তরে ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ ও পূর্বে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. আলী আকবর। তিনি সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক। পরপর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর তিনি। ওয়ার্ডের সমস্যার বিষয়ে আলী আকবর প্রথম আলোকে বলেন, জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ ওয়ার্ডের মধ্যের নালাগুলো বেশ পুরোনো ও ছোট। তা দিয়ে পানিপ্রবাহ কম হয়। অন্যদিকে সচেতনতার অভাবে ড্রেনের মধ্যেই অনেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। এতে নালাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এসব কারণেই ভারী বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে নতুন করে যেভাবে ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে আর জলাবদ্ধতা হবে না।