‘মাছ বা মাংস মাসে একবার কেনা মুশকিল হয়ে যায়’
ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র নীলটুলী এলাকা। এ এলাকার ফরিদপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ের সামনে মুজিব সড়কের পাশে চামড়ার জুতা পলিশ, ছেঁড়াফাটা জুতা ও স্যান্ডেল সেলাই করার কাজ করেন মিলন রবি দাস (৩৫)। প্রায় ২০ বছর ধরে কাজটি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। মাঝেমধ্যে জায়গা পরিবর্তন করতে হয়। তবে প্রেসক্লাব, টাউন থিয়েটার, সুপারমার্কেট, খন্দকারের মোড় এলাকার আশপাশ দিয়েই তাঁর কর্মক্ষেত্র।
মিলন রবি দাস বসবাস করেন রবিদাস পল্লিতে। এটি শহরের কাঁচাবাজার হাজি শরীয়তুল্লাহ বাজরের দক্ষিণ পাশে রথখোলাসংলগ্ন এলাকায়। চারদিকে পাঠখড়ির বেড়া এবং ওপরে টিনের চালার দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি খুপরি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মিলন। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা হলেন স্ত্রী মায়া রানী দাস (২৮), একমাত্র মেয়ে স্মৃতি রবি দাস (৬) ও মা মুক্তি রানী দাস (৪৮)। অভাবের তাড়নায় মিলনের স্ত্রী রানী দাসকে আশপাশের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসারে টানাপোড়েন লেগেই আছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাব এলাকায় কথা হয় মিলন রবি দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয় তাঁর। এ দিয়ে সংসার চলছে না। বউ অন্যের বাড়িতে কাজ করেও দিনে দুই বেলা খাবার জোটে না। শাকসবজি, আলুসেদ্ধ আর ডাল খেয়ে দিন কাটে। তিনবেলা পেটপুরে খেতে পারেন না। শুধু দুপুরে ও রাতে খাবার জোটে। তিনি বলেন, ‘একবার রান্না করা হয় দুপুরে, তা দিয়েই রাইতে চালাইতে হয়। ভুসি আর কাঠ দিয়ে রান্না করি। আগে এক বস্তা ভুসি ১০০ টাকা দিয়া কিনতাম, এখন বাইড়া ২৫০ টাকা হইছে। বাড়ছে কাঠের দাম। আগে কিনতাম ১৫০ টাকা মণ এখন বেড়ে ৩০০ টাকা হইছে।’
সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে বলে জানান মিলন রবি দাস। তিনি আগে জুতার কালি কিনতেন ৪০ টাকা কৌটা। এখন সেই কৌটা কিনতে হয় ৮০ টাকা। কিন্তু বেশি টাকা চাইলে কেউ জুতায় রং করতে চান না। আগে দিনে ২৫ থেকে ৩০ জোড়া জুতা পলিশ করতেন। এখন পলিশ করার জন্য ৪ থেকে ৫ জোড়ার বেশি পাওয়া যায় না।
মিলন রবি দাস বলেন, ‘মাছ বা মাংস মাসে একবার কেনা মুশকিল হয়ে যায়। মেয়ের বয়স ছয় বছর। সে তো আর সংসারের অভাব বোঝে না। এইডা খাব, ওইডা খাব বায়না ধরে। এমন জিনিস চাইয়া বহে, যা কেনার সাধ্য আমার নাই। তহন শুধু কান্দে। কান্দন থামাতে কোলে কইরা দোকানে নিয়া যাই, পাঁচ টাকার একটা জিনিস কিনা দিয়া তখনকার মতো বুঝ দেই।’ অভাব ও দারিদ্র্যের কশাঘাতে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মিলন বলেন, ‘এইডা কি কোনো মানুষের জীবন হইলো, এইভাবে কি বাঁইচা থাকা যায়?’