কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং থেকে বলা হয়, দাবি না মানা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
এদিকে কুয়েটে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের হামলার’ অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল থেকে হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানানো হয়।
কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে কুয়েট এলাকার রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েট মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনায় রাতে ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। সেখানে বলা হয়, ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি নেতা–কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারী ও অধীন কেউ কোনো রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না উল্লেখ করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে এবং এর ব্যতয় ঘটলে শিক্ষক–কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আজীবন বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টি স্পষ্টভাবে অধ্যাদেশে উল্লেখ করতে হবে।
২. মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং তাঁদের প্রশ্রয়দাতা শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হত্যাচেষ্টা ও নাশকতার মামলা করতে হবে এবং জড়িত সবাইকে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। জড়িতদের তালিকা শিক্ষার্থীরাই প্রদান করবে।
৩. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে পর্যাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যের সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. হামলার ঘটনায় আহত সবার চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করতে হবে। আহত ব্যক্তিদের তালিকা শিক্ষার্থীদের থেকে প্রদান করতে হবে।
৫. এসব দাবি পূরণ করে ঘটনার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে পদত্যাগ করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এসব দাবি বুধবার বেলা একটার মধ্যে পূরণ করতে হবে। দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত কুয়েটের সব ক্লাস–পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এবং কোনোভাবেই হল বন্ধ ঘোষণা করা যাবে না।
খুলনা বিএনপির নিন্দা
এদিকে খুলনা বিএনপির নেতাদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় রাতে এক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ছাত্রদলের সদস্য ফরম বিতরণকালে ছাত্রশিবিরের হামলা ও ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মীকে আহত করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন খুলনা বিএনপির নেতারা। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ছাত্রশিবির খুলনাকে উত্তাপ্ত করার জন্য ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের অতর্কিত হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের মারাত্মক আহত করেছে। ছাত্রশিবির নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার না করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যানারে তারা নগরীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, যা মোটেও সর্মথনযোগ্য নয়। ছাত্রশিবির শান্তিপূর্ণ খুলনাকে অশান্ত করতে চায়। অবিলম্বে হামলাকারী শিবির ক্যাডারদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে।
বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হোসেন প্রমুখ।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।