রংপুরে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে তরুণের মৃত্যুদণ্ড

আদালত
প্রতীকী ছবি

রংপুর নগরে ধর্ষণের পর দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় মাহফুজার রহমান ওরফে রিফাত (২২) নামের এক তরুণকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোস্তফা কামাল এ রায় দেন।

একই মামলায় অপর আসামি মাহফুজারের সহযোগী আরিফুল ইসলামকে (২৭) সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। প্রধান আসামিকে আলামত গোপন করতে সহযোগিতা করেন আরিফুল।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মাহফুজার নগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুখা মধ্যপাড়া এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে এবং সহযোগী আরিফুল রংপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর কলারখামার এলাকার মহুবুল ইসলামের ছেলে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়িতে কেউ না থাকায় নগরের মধ্য গণেশপুর এলাকার এক বাসিন্দার কিশোরী মেয়ে (১৬) তার চাচাতো বোনকে (১৪) নিজের শোবার ঘরে থাকার জন্য নিয়ে আসে। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে ওই রাতে ওই কিশোরীর বাড়িতে যান মাহফুজার। কিশোরীর (১৬) সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্ক হয়। পরে কথা-কাটাকাটির জেরে ওই কিশোরীকে হত্যা করেন মাহফুজার। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তিনি ঘরের সিলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজান। এ সময় ওই ঘরে থাকা কিশোরীর চাচাতো বোন ঘটনা টের পেলে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ মেঝেতে ফেলে পালিয়ে যান মাহফুজার।

এ ঘটনায় ১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থল থেকে দুই বোনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন কোতোয়ালি থানায় ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। ঘটনার দুদিন পর ২০ সেপ্টেম্বর মাহফুজারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাহফুজার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তদন্ত শেষে মাহফুজারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পর হত্যা এবং আলামত গোপনে সহযোগিতা করায় আরিফুলের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মজনু মিয়া ও আল-আমিন। ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ আদালতের বিচারক এ রায় দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মজনু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুই বোনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছিল। মামলাটি তদন্তের সময় ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। পরে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খন্দকার রফিক হাসনাইন বলেন, মামলার আসামি মাহফুজার রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আসামি আরিফুল ইসলামকে মামলার আলামত গোপনে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এ ছাড়া আরিফকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।