টেকনাফে পাহাড় থেকে যুবককে অপহরণের পর ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

অপহরণ
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় পাহাড় থেকে মাহমুদুল হক (৩০) নামের এক যুবককে অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিষবনিয়া পাহাড়ে কঞ্চি কাটতে গিয়ে ওই যুবক অপহরণের শিকার হন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর মুঠোফোনে ওই যুবকের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে।

অপহৃত মাহমুদুল হক উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিষবনিয়া গ্রামের আলী আহমদের ছেলে। স্বজনদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা টাকার জন্য স্থানীয় লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে। মাহমুদুলকেও মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছে।

বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদ উল্লাহ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল সকালে মাহমুদুল পাহাড়ে কঞ্চি সংগ্রহ করতে গিয়ে আর ফেরেননি। আজ সকালে নিখোঁজ মাহমুদুলের পরিবারের কাছে অচেনা একটি মোবাইল নম্বর থেকে কল করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। ওই যুবকের পরিবারটি গরিব ও অসহায়। তাঁদের পক্ষে ৫ হাজার টাকা দেওয়াও সম্ভব নয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে মাহমুদুল বাড়ির পাশে পাহাড়ে কঞ্চি কাটতে যান। দুপুর গড়িয়ে রাত পেরোলেও তিনি ফিরে না আসায় স্থানীয় কয়েকজন যুবক দল বেঁধে তাঁকে পাহাড়ে খুঁজতে যান। কিন্তু পাহাড়ের খাদের কিছুসংখ্যক কঞ্চি পড়ে থাকতে দেখলেও তাঁর সন্ধান পাননি। ঘটনাস্থলে অনেক মানুষের পদচিহ্ন দেখতে পান তাঁরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাহাড়ে খুঁজতে যাওয়া এক যুবক প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ে কিছু দূর যাওয়ার পর খাদে কিছু কঞ্চি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে অনেক মানুষের পায়ের চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পাহাড়ে অবস্থান করা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাঁকে অপহরণ করেছে। আগেও ওই পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে স্থানীয় লোকজনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।

অপহৃত যুবকের মা শামসুন্নাহার বলেন, আজ সকালে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, মাহমুদুলকে জীবিত ফেরত চাইলে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে ছেলের লাশ পাওয়া যাবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। ছেলের প্রাণনাশের হুমকির কথা শুনে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি। তবে ছেলেকে উদ্ধারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।

জানতে চাইলে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে গতকাল রাতে বিষয়টি শুনেছেন। আজ দুপুর পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। এরপরও বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশ কাজ করছে বলে তিনি জানান।

গত সাড়ে ৯ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮৭ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৩ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকি ৪৪ জন রোহিঙ্গা। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৩৯ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে।