‘আমার কানাইরে কেন গুলি করে হত্যা করল’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে গত জুলাইয়ে ছররা গুলি লাগে জিহাদ হাসানের (১৭)। সুস্থ হয়ে সে আবারও আন্দোলনে যোগ দেয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মিছিলে সে আবারও গুলিবিদ্ধ হয়। এবার সে চলে গেল না–ফেরার দেশে।
নিহত জিহাদ হাসান (মাহিন) কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকারগাঁও গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে। সে ঢাকার ড. মাহববুর রহমান মোল্লা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। পরিবারের সঙ্গে সে ঢাকায় থাকত।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে জিহাদ প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিল। ১৭ জুলাই আন্দোলনে গিয়ে তার পায়ে ছররা গুলি লাগে। সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়। ৫ আগস্ট বিকেলে ঢাকার শনির আখড়া এলাকায় বিজয় মিছিলে কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে জিহাদ মারা যায়। পরদিন ৬ আগস্ট গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
আজ সোমবার সকালে ঢাকারগাঁও গ্রামে জিহাদ হাসানের বাড়িতে গিয়ে কান্নার শব্দ শোনা যায়। তাঁর মা কোহিনুর আক্তার আহাজারি করছেন। প্রতিবেশীদের অনেকে ওই বাড়িতে এসেছেন। তাঁদের অনেকে নীরবে চোখের জল মুছছেন। ছেলের কথা বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন কোহিনুর আক্তার। পাশেই ছিলেন জিহাদের বাবা আলম মিয়া। তিনি নির্বাক বসে আছেন।
একপর্যায়ে কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘এত করে নিষেধ করার পরও ছেলেক ঘরে রাখতে পারলাম না। আন্দোলনে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল। আমার কানাইরে (ছেলে) এনে দে। তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। কী দোষ ছিল আমার কানাইয়ের? আমার কানাইরে কেন গুলি করে হত্যা করল?’
ঢাকার বর্ণমালা স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল জিহাদ। তাঁর স্বপ্ন ছিল ব্যারিস্টার অ্যাট ল (বার অ্যাট ল) ডিগ্রি নেওয়ার। তাঁর মা কোহিনুর আক্তার আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘আমার কানাইয়ের স্বপ্ন ছিল ব্যারিস্টার হওয়ার। একটি গুলিতে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কোহিনুর আক্তার বলেন, ‘জিহাদ ছিল আমার দুই কানাইয়ের মধ্যে বড় কানাই। ভাই–বোন, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তার সব সময় সুসম্পর্ক ছিল। ছোট-বড় সবার সঙ্গেই সহজে মিশতে পারত। এক গুলিতেই আমার এ কানাই শেষ হয়ে গেল। কী দোষ ছিল আমার কানাইয়ের? হত্যাকারীদের বিচার চাই।’