শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন

হাজী মোশাররফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সুবর্ণচর, নোয়াখালী।ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের নতুন পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত হাজি মোশারেফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের স্বীকৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অনলাইন আবেদন করার অভিযোগ উঠেছে। এসএসসি পাস করা দুই শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির কোনো আবেদন না করলেও ওয়েবসাইটে ‘আবেদন সম্পন্ন হয়েছে’ লেখা দেখতে পাওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই কলেজে ভর্তি হতে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা তাদের নামে করা আবেদন বাতিল করে নতুন করে পছন্দের কলেজে ভর্তির আবেদন করতে পারছে না। প্রতিটি আবেদনে হাজি মোশারেফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম প্রথম পছন্দে রাখা হয়েছে। তাই এই প্রতিষ্ঠানের কেউ এ কাজ করেছেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ধারণা। এ পরিস্থিতিতে কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় পাঁচটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ভোগান্তিতে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সওদাগর হাট উচ্চবিদ্যালয়, গ্লোব বাজার হাইস্কুল, চরমজিদ এস ইডি পি মডেল উচ্চবিদ্যালয়, চরমজিদ ভূঁইয়ার হাট দাখিল মাদ্রাসা এবং হাজি মোশারেফ হোসেন উচ্চবিদ্যালয়। হাজি মোশারেফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার স্বীকৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে ওই আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সওদাগর হাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সজীব চন্দ্র কাহার জানায়, সে এসএসসি পরীক্ষায় সিজিপিএ–৪ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ইচ্ছে ছিল ভালো কোনো কলেজে ভর্তির আবেদন করার। আবেদন করতে গিয়ে দেখে সার্ভারে তার অনলাইন আবেদন জমা নিচ্ছে না। পরে জানতে পারে, হাজি মোশারেফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে না জানিয়ে তাদের কলেজকে প্রথম পছন্দ দিয়ে তার আবেদন করেছে। অথচ সেখানে ভর্তির কোনো ইচ্ছে তার নেই। এখন সে অন্য কোথাও আবেদন করার সুযোগও পাচ্ছে না।

সজীব চন্দ্রের বড় ভাই রাজীব চন্দ্র কাহার বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের না জানিয়ে কীভাবে এ ধরনের কাজ করেছে? যাদের শুরুই অন্যায় দিয়ে, তারা শিক্ষার্থীদের কী শেখাবে? আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার ছোট ভাইকে অন্যত্র আবেদন করার জন্য যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

একই অভিযোগ পূর্ব চরবাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ বছর এসএসসি পাস করা আফিফা আক্তারের। আফিফা বলেন, সে নিজের পছন্দের কলেজে অনলাইন ভর্তির আবেদন ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখে ভর্তি ফরম পূরণ আগেই হয়ে গেছে। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, তাকে না জানিয়ে হাজি মোশারেফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকেই এসএমএস করা হয়েছে। এখন নিজের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাজি মোশারেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিরঞ্জন চন্দ্র নাথ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সম্মতি নিয়েই তাঁরা তাদের নামে অনলাইনে ভর্তির আবেদন পূরণ করেছেন। এখন তারা ভর্তি হতে চাইছে না। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তাদের ওটিপি নম্বর ফেরত দেওয়া হয়েছে। তারা ওই নম্বর দিয়ে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। নতুন প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর জন্য তিনি ওই কাজটি করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ওই প্রতিষ্ঠান যে কাজ করেছে, সেটি একটি গুরুতর অপরাধ। এ বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী তাঁর কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।