নজরকাড়া সাদা ও গোলাপি মহিষ

ক্রেতাদের নজর কাড়ছে সাদা ও গোলাপি রঙের মহিষ। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের একটি খামারে
ছবি: প্রথম আলো

মহিষ মানেই চকচকে কালো রঙের লোমশ একটা প্রাণী। সাধারণত মানুষ এমনটাই জানে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের মানুষ কিন্তু সাদা ও গোলাপি মহিষ দেখে অভ্যস্ত। ওই গ্রামের একটি খামারে কয়েকটি রঙিন মহিষ আছে। এক খামারি মহিষগুলো পালছেন। নজরকাড়া প্রাণীগুলো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন।

সাধারণ মহিষের তুলনায় রঙিন এই মহিষের দাম একটু বেশি। ঈদে-পার্বনে শৌখিন মানুষেরা কিনে নিয়ে যান বিশেষ রঙের এই মহিষ।

টেংরা গ্রামে রাজিউল হাসান নামের এক উদ্যোক্তার খামারে বিশেষ ওই মহিষের দেখা পাওয়া গেছে। রঙের বৈচিত্র্যের কারণে মহিষগুলোর চাহিদা তুঙ্গে, জানালেন ডিজাইন এগ্রো পার্কের রাজিউল। তাঁর খামারে সাদা রঙের ২৫টি, আর গোলাপি রঙের ৫টি মহিষ ছিল। এর মধ্যে সাতটি বিক্রি হয়ে গেছে। এগুলো ওজনভেদে ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে মহিষগুলো আলাদা কোনো জাতের নয়। চিরাচরিত কালো রঙের মহিষের পাল থেকে কেন এমন বিচিত্র রঙের মহিষের জন্ম হয়, তা জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম আতিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ত্বকে মেলালিন নামক একধরনের রঞ্জকের অসামঞ্জস্য উপস্থিতির কারণে মহিষের গায়ের রং কালো না হয়ে সাদা বা গোলাপি হয়। এটি মহিষের কোনো রোগ নয়।

সাধারণ মহিষের তুলনায় রঙিন এই মহিষের দাম একটু বেশি। ঈদে-পার্বনে শৌখিন মানুষেরা কিনে নিয়ে যান বিশেষ রঙের এই মহিষ
ছবি: প্রথম আলো

আতিকুর রহমান আরও বলেন, এমন রঙের বৈচিত্র্য শুধু মহিষের নয়, অন্যান্য প্রাণী যেমন বাঘ, সিংহ, ময়ূর এমনকি মানুষের মধ্যেও হতে পারে। সাদা বা গোলাপি মহিষের জন্ম হয় খুবই কম। তিনি বলেন, শ্রীপুরে ব্যক্তিপর্যায়ে কারও কাছে সাদা বা গোলাপি মহিষ আছে বলে তাঁর জানা নেই। তবে একটি খামারে এ ধরনের কয়েকটি মহিষ আছে।

সম্প্রতি ওই খামারে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি গরু ও বিচিত্র রঙের মহিষগুলো একসঙ্গে রাখা। মহিষের পরিচর্যায় ব্যস্ত প্রশিক্ষিত কর্মীরা। কালো মহিষের সারিতে সাদা ও গোলাপি রঙের মহিষগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। এ সময় কয়েকজন ক্রেতাকে খামারে আসতে দেখা যায়। তাঁরা ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে সাদা মহিষ কিনতে এসেছেন।

ময়মনসিংহ থেকে আসা মো. আজিজুল হক প্রথম আলোকে বললেন, তিনি সাদা রঙের মহিষের খোঁজ করছিলেন। শ্রীপুরে চাকরি করা এক আত্মীয়ের কাছ থেকে সাদা মহিষের খোঁজ পান। তিনি বলেন, তিন বছর আগে শেরপুর সদরে প্রথমবারের মতো সাদা রঙের মহিষ দেখেন। এর পর থেকে এই রঙের মহিষ কোরবানির ইচ্ছা ছিল তাঁর। তাই খোঁজ নিতে এসেছেন। দামে মিললে কিনে নিয়ে যাবেন।

সালাউদ্দিন আহমেদ নামের কিশোরগঞ্জ থেকে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, তিনি গরুর ব্যবসা করেন। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী থেকে তিনি সাদা মহিষ কিনতে এসেছেন। তবে নিজের জন্য নয়, মহিষ কিনে বিক্রি করবেন।

সাদা ও গোলাপি মহিষের একেকটির ওজন ৬৫০ থেকে ৮০০ কেজি। তবে মহিষগুলো আলাদা কোনো জাতের নয়
ছবি: প্রথম আলো

সাদা ও গোলাপি মহিষের একেকটির ওজন ৬৫০ থেকে ৮০০ কেজি। খামারি রাজিউল হাসান বলেন, সাদা ও গোলাপি মহিষের চাহিদা অনেক। সাধারণ মহিষের তুলনায় এর দামও বেশি। ইতিমধ্যে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বেশ কয়েকটি মহিষ বিক্রি করেছেন।
কয়েক যুগ ধরে মহিষ লালন-পালন করেন ধামলই গ্রামের আবদুর রশিদ। তিনি জানান, সাদা রঙের মহিষ তিনি কখনো দেখেননি। তবে কালো রঙের একেকটি মহিষ আকারভেদে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দামে বিক্রি হয়।

আবদুর রশিদ বলেন, গ্রামে কৃষক পর্যায়ে মহিষ লালন-পালনকারীরা সাধারণত মাঠের কাঁচা ঘাস খাইয়ে থাকেন। কিন্তু একই মহিষ কোনো খামারে লালন-পালন করলে সেটিকে কারখানায় তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের খাবার দেওয়া হয়। এতে মাংস বেশি হয়। তবে স্বাদে সাধারণ কৃষকের মহিষের মাংস এগিয়ে থাকে।