সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে রিমালের কবলে পড়ে নিখোঁজ ৩ জেলে

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে শ্যামনগর উপজেলার আঠুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালক্ষ্মী গ্রামে একটি গাছ উপড়ে পড়েছে ঘরের ওপর
ছবি: প্রথম আলো

সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কবলে পড়ে তিন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যরা বন বিভাগসহ বিভিন্ন মহলে এ কথা জানিয়েছেন।

নিখোঁজ তিনজন হলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চণ্ডীপুর এলাকার বাবুর আলী মোড়লের ছেলে সাইফুল মোড়ল (৪২), হযরত আলী গাজীর ছেলে হায়দার আলী গাজী (৩০) ও গোলাম রব্বানী মোড়লের ছেলে রিপন মোড়ল (৩০)।

নিখোঁজ সাইফুলের ভাই আবু সালেহ মোড়ল বলেন, ২৫ মে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে পদ্মপুকুর এলাকার সাইফুল, হায়দার, মাকছুদুল, বাসার ও আয়ুব আলী দুটি নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের ভেতরে নদীতে মাছ ধরতে যান। ওই দিন তাঁদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে। ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার পর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে একটি নৌকায় থাকা মাকছুদুল, বাসার ও আয়ুব আলী খোঁজ মিললেও অন্য নৌকায় থাকা সাইফুল, হায়দার ও রিপনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

আবু সালেহ মোড়ল বলেন, গত ছয় দিনেও তিনজনের খোঁজ পাননি। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সাতক্ষীরার রেঞ্জের কোবাদক স্টেশন কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা, বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা ও খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষককে বিষয়টি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁদের নিজস্ব উদ্যোগে সুন্দরবনের যে এলাকা থেকে তাঁর ভাইসহ তিন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন, ওই এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, তাঁর ভাই হায়দার আলী গাজী সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে যান ২৫ মে। আর নিখোঁজ হন ২৬ মে। বিষয়টি তাঁরা কোস্টগার্ডকে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে নিখোঁজ তিনজনের সন্ধানে তাঁর বড় ভাই আকবর আলী গাজী আজ শুক্রবার সকালে সুন্দরবনে গেছেন।

নিখোঁজ সাইফুলের ভাই মাকছুদুল মোড়ল বলেন, তিনিসহ বাসার ও আয়ুব আলী এক নৌকায় ছিলেন। অন্য নৌকায় ছিলেন তাঁর ভাই সাইফুল, হায়দার ও রিপন। ২৬ মে দুপুরের দিকে ঝড় শুরু হলে তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য একদিকে যান। তাঁর ভাইসহ অন্যরা যান আরেক দিকে। একপর্যায়ে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঝড় শেষে তাঁরা বনের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেও ওই তিনজনের হদিস পাননি।

সাতক্ষীরার কোবাদক স্টেশন কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, তিন জেলে নিখোঁজের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছেন। তবে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়নি।

সাতক্ষীরা বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কলাবগি স্টেশনের মধ্যে। তাই বিষয়টি খুলনা রেঞ্জ কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে তিন জেলে নিখোঁজের খবর শুনেছেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমান। তিনি বলেন, যে এলাকা থেকে তাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন, সেটি কলাবগি স্টেশনের আওতায় ভদ্র ও পাশাখালী দুটি স্থানের মাঝামাঝি নিশাখখালী এলাকা। কলাবগি স্টেশনে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। নিখোঁজ জেলেদের স্বজনেরা ওই স্টেশনে পৌঁছেছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।