স্নানোৎসবের পরদিন রায়গঞ্জে জমজমাট বউ মেলা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নান উৎসবের পরের দিন বউ মেলায় নারীদের ভিড়। বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের ভূঞাগাঁতীতে
ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নানোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার। স্নানোৎসবের পরদিন আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে জমজমাট বউ মেলা। উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়নের ফুলজোড় নদীপাড়ের ভূঞাগাঁতী এলাকায় ঐতিহ্যবাহী এ মেলার বৈশিষ্ট্য হলো বেশির ভাগ ক্রেতাই নারী। বিক্রেতাদের মধ্যেও অনেকে নারী।

বউ মেলা সম্পর্কে উপজেলার মহেশপুর এলাকার ঠাকুর ইন্দ্রনারায়ণ সান্যাল বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাপমোচনে পুণ্যস্নানের একটি তিথি হলো চৈত্র মাসের অষ্টমী স্নান। মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্রের জলে স্নান করে পাপমুক্ত হয়েছিলেন বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম মুনি। ব্রহ্মপুত্রের শাখানদী ফুলজোড় নদীর ভূঞাগাঁতী এলাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভক্তরা স্নানে অংশ নেন। এ উপলক্ষে উপজেলার তিনটি স্থানে স্নানের দিন মেলা বসে। এসব মেলায় নারীদের অংশগ্রহণ কম থাকে। তাই পরদিন শুধু নারীদের জন্য ভূঞাগাঁতী এলাকায় বউ মেলা বসে।

বেলা ১১টার দিকে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, গৃহস্থালির বিভিন্ন দরকারি জিনিসের পাশাপাশি মেলায় উঠেছে ঝুরি, মুড়কিসহ নানা স্বাদের মিষ্টান্ন। বিক্রি হচ্ছে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মসলাজাতীয় খাবার ও মৌসুমি ফল।

ভূঞাগাঁতী এলাকার বিউটি রানী ঘোষ বলেন, করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল মেলা। গত বছরের মেলাও জমেনি। এবার সবার অংশগ্রহণে আগের মতোই জমজমাট হয়ে উঠেছে বউ মেলা। ছোটদের বায়নার বিভিন্ন জিনিস কিনতে হয়। সেই সঙ্গে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনতে হয় বলে তিনি জানান।

বগুড়ার শেরপুর থেকে বউ মেলায় আসা রমা রানী রায় বলেন, মেলা উপলক্ষে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। এ মেলা এলাকার ঐতিহ্যের স্মারক বলে জানান তিনি। স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী দীপ্তি সরকার মেলায় এসেছে মাসহ বাড়িতে আসা নারী আত্মীয়দের নিয়ে। সে জানায়, অনেক দিন পর বউ মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে তার।

বউ মেলায় গৃহস্থালির কাজে প্রয়োজনীয় বাঁশের তৈরি কুলাসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বসেছিলেন প্রায় ৭৫ বছরের মায়া রানী তরণী দাস। তিনি বলেন, বিক্রি যা–ই হোক, এ মেলায় না এলে ভালো লাগে না। তবে পিযুষ কান্তি দাস বলেন, বিভিন্ন জায়গায় হাটবাজার গড়ে উঠেছে। মেলায় যা পাওয়া যায়, তা প্রায় সারা বছরই কেনা যায়। তাই মেলায় বিক্রি কমে গেছে।

স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক অমলকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘কথায় বলে, আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে বউ মেলা এ পার্বণের বাইরে আরেকটি উৎসব। এ উৎসবে সব বয়সী নারীর অংশগ্রহণ মেলাকে জমজমাট করে তোলে।’