আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ, কোনো আটক নেই, হয়নি মামলাও

হেলমেট পরে বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে ককটেল ছুড়ছে এক দুর্বৃত্ত। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে যশোর শহরের ঘোপ এলাকায়
ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত

ঘড়ির কাঁটায় রাত ১০টা ৪০ মিনিট। যশোর শহরের ঘোপ এলাকায় বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়ির ফটকে এসে থামে পাঁচটি মোটরসাইকেল। প্রতিটি মোটরসাইকেলে ছিলেন দুই থেকে তিনজন আরোহী। তাঁদের কারও মুখে মাস্ক, কারও মাথায় হেলমেট। মোটরসাইকেল থেকে নেমেই তাঁরা তরিকুলের বাসভবন লক্ষ্য করে একের পর এক ককটেল নিক্ষেপ করেন। মুহূর্তেই কেঁপে ওঠে বাসভবন। বিস্ফোরণে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। মাত্র ৮৫ সেকেন্ডে ২৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

সিসিটিভির ফুটেজে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত শনিবার রাতে তরিকুলের বাড়িতে হামলার সময় তাঁর স্ত্রী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম বাড়িতে একাই ছিলেন। তাঁদের ছেলে ও বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম বাড়িতে ছিলেন না।

এ নিয়ে গত চার বছরে তরিকুল ইসলামের বাড়িতে মোট ছয়বার হামলার ঘটনা ঘটল। প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি। কোনো ঘটনায় মামলাও হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে প্রথম দিকের ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগও আছে। যদিও পুলিশ বলছে, তাঁরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, প্রতিটি হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে বলে, ‘দেখছি, দেখব।’ কিন্তু কোনো ঘটনায় হামলাকারীদের কাউকে আটক করেনি পুলিশ। মামলা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে হামলার সময় আমরা মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। এরপর আমরা আর কোনো ঘটনায় মামলা করার মতো আস্থা পাইনি। দেশে ন্যায়বিচারের শাসন আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।’

বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের বাসভবনের ফটকে বিস্ফোরণের ক্ষতচিহ্ন
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে হামলার আগে তরিকুলের বাসভবনে আরও পাঁচবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি প্রয়াত মো. নুরন্নবী। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে মাঠে নামায় শহরের দড়াটানা মোড়ে অনিন্দ্য ইসলামের গাড়িতে প্রকাশ্যে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যায় তিনি বাড়িতে পৌঁছালে সেখানেও মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত সংগ্রহ করলেও কাউকে আটক করেনি। এমনকি থানায় মামলা বা জিডিও হয়নি।

আরও পড়ুন

গত বছর ২৮ আগস্ট দিবাগত রাতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তরিকুলের বাড়িতে বোমা হামলা করা হয়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে দুর্বৃত্তরা উপশহরে গিয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং ধর্মতলা এলাকায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে হামলা করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় অনিন্দ্য ইসলামের বাড়িতে আরও তিন দফায় ককটেল হামলা করা হয়। কোনো ঘটনায়ই পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।

বিএনপির নেতা অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, বিএনপি বড় কোনো কর্মসূচির আগে প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে বোমা হামলা চালায়। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় হামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো ঘটনা না ঘটলেও পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে গ্রেপ্তার করছে। অথচ বোমা বা ককটেল হামলার পর আলামত সংগ্রহ করেও পুলিশ জিডি পর্যন্ত করেনি। কাউকে আটক তো দূরের কথা। পুলিশ বাদী হয়ে কেন মামলা করল না, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হুসাইনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে বিষয়বস্তু জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

সবশেষ হামলার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলার বিষয়ে বলেন, পুলিশ যেকোনো ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করতে পারে। তবে ব্যক্তিগত বিষয় হলে ব্যক্তি বাদী হলে ভালো হয়।

আরও পড়ুন

এদিকে ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির নেতা অনিন্দ্য ইসলামের বিরুদ্ধে যশোর থানায় চারটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আগাম জামিন নিতে না পারায় বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন। এ ছাড়া ২৮ অক্টোবরের আগে যশোর, নড়াইল ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ৬০টির বেশি মামলা আছে।

আরও পড়ুন

অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগে ও পরে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। বিএনপি দমনে সরকার ও পুলিশ অত্যন্ত বেপরোয়া আচরণ করছে। ২৮ অক্টোবরের পরের মামলায় উচ্চ আদালত বিএনপির নেতাদের আগাম জামিন দিচ্ছেন না। এ জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হননি।

আরও পড়ুন