বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অক্সিজেন বিতরণ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনায় সুফল পেতে শুরু করেছেন সাধারণ রোগীরা। সময়মতো অক্সিজেন পেয়ে রোগীর স্বজনদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তিও ফিরেছে।
গত জুলাইয়ের শুরুতে বিভাগে করোনা সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছানোর পর এই হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকে। ৩০০ শয্যার হাসপাতালে শয্যার অভাবে মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে লোকজনকে। এসব রোগীর ৭০ ভাগই গুরুতর শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু অনেকের সময়মতো অক্সিজেন না পাওয়ার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। স্বজনদের অভিযোগ, সময়মতো অক্সিজেন না পাওয়ায় অনেক রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল প্রশাসন গত বুধবার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন নিয়ে আসে।
হাসপাতালে ভর্তি আবুল হোসেন নামের এক রোগীর স্বজন শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন যেসব রোগীর টাকা ছিল, প্রভাব ছিল, তাঁরাই ঠিকমতো সিলিন্ডার, শয্যা পেতেন। আগে একজন রোগী ৪-৫টা সিলিন্ডার মজুত করে রাখত। সাধারণ রোগীরা অক্সিজেনের অভাবে মরে গেলেও সিলিন্ডার মিলত না। কিন্তু বুধবার থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে সিলিন্ডার বিতরণ শুরু হওয়ায় এখন আর সে অবস্থা নেই। এতে সাধারণ রোগীরা স্বস্তি পাচ্ছেন। এখন দেখি এই অবস্থা কত দিন অব্যাহত থাকে।’
হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহে অব্যবস্থাপনা নিয়ে গত মঙ্গলবার প্রথম আলো অনলাইনে ‘তিন ঘণ্টায়ও পেলেন না অক্সিজেন, ছটফট করে মারাই গেলেন রানু বেগম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরদিন বুধবার থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখে সিলিন্ডারবাহী গাড়ি থেকেই অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ শুরু হয়। এরপর গত বুধবার প্রথম আলো অনলাইনে ‘করোনা ইউনিটে অনিয়মের অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতে অক্সিজেন বিতরণ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বুধবারই করোনা ইউনিটের রোগীদের অক্সিজেন ব্যবস্থাপনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদারকি কমিটি গঠন করেন হাসপাতালের পরিচালক এ ই এম সাইফুল ইসলাম। এই কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন চাহিদা যাচাই করার পরপরই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রোগীদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। ফলে এখন আর কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে প্রভাবশালী রোগীর স্বজনেরা একাধিক সিলিন্ডার নিয়ে মজুত করতে পারছেন না।
হাসপাতাল প্রশাসন সূত্র জানায়, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০০ শয্যার করোনা ইউনিটে ৫৯৩টি ছোট এবং ৫০টি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। এসব সিলিন্ডার প্রতিদিন দুবার করে রিফিল (ভর্তি) করা হচ্ছে। পাশাপাশি ১০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি তরল অক্সিজেন সিলিন্ডারও আছে। এটি দিয়ে হাসপাতালের ১২৮টি শয্যায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিচালক এ ই এম সাইফুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, আগে রোগীর অক্সিজেনের চাহিদা থাকলে তা একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হতো। এরপর অক্সিজেন সিলিন্ডারের গাড়ি আসার পর ওই সিরিয়াল অনুযায়ী রোগীর স্বজনদের হাতে সিলিন্ডার তুলে দেওয়া হতো। বর্তমানে সিলিন্ডারবাহী গাড়ি করোনা ইউনিটের সামনে পৌঁছার পর পুলিশের সহায়তায় সেগুলো করোনা ওয়ার্ডের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেসব ফ্লোরে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনেরা ওই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর কাছে গিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা জানান। এরপর সংশ্লিষ্ট ফ্লোরের দায়িত্বরত নার্স ওই রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা তদারকি করেন। অক্সিজেন প্রয়োজন আছে নিশ্চিত হলেই কেবল তাঁকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে এখন রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে অভিযোগ কমে এসেছে।