অগ্নিকাণ্ডে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় জেলা পরিষদ ভবন ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হেফাজতের বিক্ষোভ ও হরতাল সহিংসতায় জেলা পরিষদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

রোববার বেলা একটার দিকে নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে দুই পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জেলা পরিষদের কাজকর্ম এবং সহিংসতায় ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। জেলাজুড়ে বিভিন্ন রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজসহ বিবিধ জনকল্যাণমূলক কাজ করে জেলা পরিষদ।

শফিকুল আলম বলেন, ২৬ মার্চ বিকেল সোয়া চারটার দিকে হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিল চলার সময় ৪০০ থেকে ৫০০ মাদ্রাসার ছাত্র এবং দুষ্কৃতকারী জেলা শহরের কাউতলীর জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় হামলা চালান। তাঁরা প্রধান ফটক ভেঙে নিচতলার প্রধান ফটক ও দুই দিকের সীমানাদেয়ালের গ্রিল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেই প্রথমত আটটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও বড় আকারের ডিজিটাল এলইডি বোর্ড ভেঙে ফেলেন। ডাকবাংলোর আঙিনায় নির্মিত জাতীয় প্রতীক শাপলার ক্ষতি সাধন করেন। সে সময় ডাকবাংলোয় থাকা তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দারোয়ান কাম কেয়ারটেকার কোনোরকমে আত্মরক্ষা করেন। তৃতীয় তলার উন্নয়নকাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক ভয়ে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। বর্তমানে ওই শ্রমিক ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিক্ষোভকারীরা ডাকবাংলোর ভেতরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। ডাকবাংলোর ছয়টি কক্ষের সব আসবাব ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তিনটি কক্ষে অগ্নিসংযোগের কারণে আগুনের প্রচণ্ড তাপে ছাদ ও দেয়ালের ক্ষতি হয়। আনুমানিক ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘটনায় ৪ এপ্রিল সদর থানায় একটি মামলা করা হয়।

শফিকুল আলম বলেন, আগুন নেভানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার টেলিফোন করা হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের কারণে গাড়ি বের করতে না পারায় তাঁরা অপারগতা প্রকাশ করেন। দারোয়ানসহ স্থানীয় লোকজন রাত একটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শফিকুল বলেন, ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতাল চলার সময় বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র ও দুষ্কৃতকারী অতর্কিতভাবে জেলা পরিষদের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত করেন। একপর্যায়ে তাঁরা জেলা পরিষদ ভবনের নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করেন। নিচতলার গ্যারেজ ভেঙে ভেতরে থাকা গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেন। জেলা পরিষদের দ্বিতীয় তলার বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভাঙচুর করেন। আগুনে ১২টি কম্পিউটার, ৪টি ল্যাপটপ, ৩টি স্ক্যানার, ৩টি ইন্টারনেট সংযোগ, ২টি সিসি ক্যামেরা, ১টি জেনারেটরসহ সব আসবাব ও নথিপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জেলা পরিষদের ভবনেরও ক্ষতি হয়েছে। জেলা পরিষদ ও ডাকবাংলোর আগুনে পুড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ এপ্রিল সদর থানায় একটি মামলা হয়। হামলার সময় অনেক কর্মচারী প্রথম ও দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আহত হন।

শফিকুল আরও বলেন, ‘জেলা পরিষদে আগুন দেওয়ার সময়ও জেলা ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। কিন্তু হেফাজতের হরতালের কারণে তারা অপারগতা প্রকাশ করে। পরে স্থানীয়ভাবে পানি সংগ্রহ করে রাত প্রায় আটটায় জেলা পরিষদের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। জেলার ৪৬টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডব চালানো হয়। এমন তাণ্ডব আগে কখনো দেখিনি।’ জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়াসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।