অগ্নিকাণ্ডের পর তৎপর ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রামে তিন দিনে ২২টি কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন

রাসায়নিক দ্রব্যের কনটেইনার নিয়ে কোনো ধরনের প্রটোকল না মানার ফলে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। গত তিন দিনে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত মোট ২২টি কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন করেছে সংস্থাটি। এ সময় পরিদর্শন দলের সদস্যরা ডিপো কর্তৃপক্ষ থেকে সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ পরিদর্শনের জন্য সাতটি দল গঠন করেছিল ফায়ার সার্ভিস।

৪ জুন সীতাকুণ্ডে অবস্থিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এর দেড় ঘণ্টা পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ১০ জন। আহত হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দুই শতাধিক মানুষ। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ জন্য চট্টগ্রামের সব কটি কনটেইনার ডিপো ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

গতকাল মঙ্গলবার বিএম কনটেইনার ডিপোসহ সীতাকুণ্ডের আরও চারটি ডিপো থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সসহ সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন দল। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের পরিদর্শক ওমর ফারুক ভূঁইয়া।

ওমর ফারুক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ডিপোগুলোর ভেতর কী কী পণ্য রাখা আছে, কীভাবে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা হয়, নিরাপত্তাব্যবস্থা কী, সেসব খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন নথি ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি। যেসব ডিপোতে অগ্নিনিরাপত্তামূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, তাদের সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও দেওয়া হবে।

শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগে কর্মরত শ্রমিকদের কমপক্ষে ১৮ শতাংশকে অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণযন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মধ্য থেকে অগ্নিনির্বাপণ দল, উদ্ধারকারী দল ও প্রাথমিক চিকিৎসা দল (প্রতিটি দলে ছয়জন করে) গঠন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সীতাকুণ্ডের ফায়ার হাইড্রেন্ট, সেফটি প্রশিক্ষণ নেই তিনটি ডিপোতে

সীতাকুণ্ডের ছয়টি কনটেইনার ডিপোর তিনটিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণকাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল) ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই। ডিপোগুলোতে পরিদর্শনে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

এ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বে লিংক, নেমসন কনটেইনার ডিপো ও বিএম কনটেইনার ডিপো। তবে কেডিএস লজিস্টিক ডব্লিউএসি ও পোর্টলিংক কনটেইনার ডিপোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ আছে। কিন্তু তাদের ছোট ফায়ার এক্সস্টিংগুইসারের (অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র) বদলে বড় (২৫ কেজির বেশি) ফায়ার এক্সস্টিংগুইসার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন পরিদর্শক দল।

পরিদর্শক ওমর ফারুক ভূঁইয়া বলেন, নেমসন কন্টেইনার ডিপোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। তবে তাদের দুটি পানির রিজার্ভার আছে। বিএম কন্টেইনার ডিপো তো ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের ডিপো চালুর আগে ফায়ার হাইড্রেন্ট চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নতুন ডিপো বে লিংককেও ফায়ার হাইড্রেন্ট ও সেফটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে তারপর ডিপোর কার্যক্রম চালু করতে বলা হয়েছে।

অপরিকল্পিতভাবে রাখা রাসায়নিক এক ডিপোতে

সীতাকুণ্ডের ছয়টি কনটেইনার ডিপোর মধ্যে শুধু পোর্ট লিংক কন্টেইনার ডিপোতে রাসায়নিকের কনটেইনার রাখার তথ্য পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন দল। সেখানে কনটেইনারগুলো অপরিকল্পিতভাবে রাখা আছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক জসিম উদ্দিন প্রধান। তিনি জানান, পরিকল্পিত উপায়ে ডিপোতে কনটেইনার রাখতে ডিপো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবেন তাঁরা। আপাতত মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে তাঁদের।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ডিপো ব্যবস্থাপনায় রাসায়নিকে ভর্তি কনটেইনারগুলোকে অন্যান্য কনটেইনার থেকে আলাদা রাখতে হবে। এ জন্য দেয়াল নির্মাণ করতে হবে।
জসিম উদ্দিন প্রধান বলেন, ওই ডিপোতে গার্মেন্টসপণ্যের কনটেইনারের সঙ্গে রাসায়নিকের কনটেইনার রাখা আছে। কন্টেইনার পৃথক রাখার কোনো দেয়ালও সেখানে নেই। তাই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছেন তিনি।