অটোচালকের সততায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ফেরত পেলেন যাত্রী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূইয়ার কার্যালয়ে রহিমা বেগমের হাতে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়। এ সময় অটোচালক মনির হোসেন (হলুদ রঙের টি–শার্ট পরিহিত) উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম আলো

ভুলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকাভর্তি ব্যাগ ফেলে রেখে গিয়েছিলেন এক নারী যাত্রী। এ ঘটনার তিন দিন পর ওই নারীকে টাকাভর্তি ওই ব্যাগ ফেরত দিয়েছেন অটোরিকশাচালক। চালকের সততায় টাকাগুলো ফিরে পেয়ে ওই নারী ভীষণ খুশি হয়েছেন। ব্যতিক্রমধর্মী এ ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায়।

আজ রোববার সকালে আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূঁইয়া তাঁর কার্যালয়ে রহিমা বেগম নামের ওই নারীর কাছে টাকাগুলো তুলে দেন। রহিমা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইর গ্রামের প্রয়াত এনামুল হোসেনের স্ত্রী।

সাড়ে ১৪ লাখ টাকাভর্তি ব্যাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূইয়ার কাছে তুলে দিচ্ছেন অটোচালক মনির হোসেন।
প্রথম আলো

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রহিমা বেগমসহ চারজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাউতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চিনাইর গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে একটি ব্যাগে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা, জমির দলিল ও ব্যাংকের চেক বই ছিল। সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নামার সময় ভুলে তাঁরা ব্যাগটি রেখে নেমে যান। পরে অটোরিকশাচালক রামরাইলের মনির হোসেন শনিবার সকালে সিটের পেছনে একটি ব্যাগ পান। ব্যাগ খুলে তিনি অনেক টাকা দেখতে পেয়ে বিষয়টি তাঁর ফুফা বনগজ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সানু মিয়াকে জানান।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, অটোচালকের ফুফা সানু মিয়া কাগজপত্র ঘেঁটে একটি মুঠোফোন নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করে জানতে পারেন টাকাগুলো অটোরিকশার যাত্রী চিনাইর গ্রামের রহিমা বেগমের। পরে তিনি বিষয়টি তাঁর আত্মীয় আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূঁইয়াকে জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূঁইয়া রোববার সকালে রহিমা বেগমের হাতে টাকাগুলো ফিরিয়ে দেন। টাকা পেয়ে রহিমা বেগম স্বস্তি প্রকাশ করে অটোরিকশাচালক মনির হোসেনকে ধন্যবাদ জানান।

যাত্রী নামিয়ে আমি বাড়িতে চলে যাই। পরদিন শুক্রবার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই। শনিবার সকালে সিএনজি পরিষ্কার করার সময় টাকার ব্যাগটি পাই। টাকাগুলো মালিককে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুশি।
মনির হোসেন, অটোরিকশাচালক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

অটোরিকশাচালক মনির হোসেন বলেন, ‘যাত্রী নামিয়ে আমি বাড়িতে চলে যাই। পরদিন শুক্রবার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই। শনিবার সকালে সিএনজি পরিষ্কার করার সময় টাকার ব্যাগটি পাই। টাকাগুলো মালিককে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুশি।’

টাকার মালিক রহিমা বেগমের ছেলে মাইন উদ্দীন বলেন, তার মা পুকুরের জায়গা বিক্রি করে টাকা নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর মা ভুলে গাড়িতে টাকার ব্যাগটি ফেলে চলে আসে। বাড়িতে এসে তাঁর টাকার কথা মনে হয়। পরে তাঁর মা চালককে খুঁজে পাননি। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদকে জানিয়ে তাঁরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে তাঁরা আখাউড়া উপজেলার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে টাকা পাওয়ার খবর পান।

এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভূঁইয়া বলেন, ‘রহিমা বেগম ভুলে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ফেলে রেখে নেমে গিয়েছিলেন।  অটোরিকশাচালক আমাকে জানালে আমি প্রকৃত মালিক ডেকে এনে তাঁর হাতে টাকাগুলো তুলে দিই।’