গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে, চেকপোস্ট ফাঁকি দিতে পারলেই ‘মুক্তি’

সর্বাত্মক লকডাউনেও মানুষ নানা অজুহাতে বের হচ্ছেন। পুলিশের চেকপোস্টও ফাঁকি দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরের তালাইমারী এলাকায় রুয়েটের সামনেপ্রথম আলো

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সপ্তম দিনের মতো চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। লকডাউনের শুরুর দুই দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় নগর মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। কিন্তু তারপর থেকে নগরে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও বেড়ে যায়। দূরদূরান্তে যাওয়া মানুষ চেকপোস্টটুকু পায়ে হেঁটে পার হয়েই উঠছে গাড়িতে। অথচ জেলা প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নগরে এই সময়ে জরুরি পরিষেবার পরিবহন বাদে কোনো গণপরিবহনই চলার কথা নয়।

গত শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম দফার লকডাউনের সাত দিন আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। নগরের করোনা পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক উন্নতি না হওয়ায় গতকাল বুধবার রাতে লকডাউন আরও সাত দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বর্ধিত এই লকডাউন চলবে ২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত।

এ কয়েক দিন নগরের বিভিন্ন চেকপোস্টে দেখা গেছে, পুলিশ একটা নির্দিষ্ট সময়ে চেকপোস্টে কঠোর অবস্থানে থাকছে। মানুষ এই সময়ে চেকপোস্ট দিয়ে হেঁটে কোনোরকমে বের হয়ে অটোরিকশা, রিকশায় নগরের গলিপথ ধরে গন্তব্যে যায়। অনেকে অবশ্য যে জায়গাতে চেকপোস্ট, সেখান দিয়ে না গিয়ে অন্য পথে যায়। এভাবে প্রতিদিন সকাল থেকেই শহরে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাচ্ছে।

নগরের করোনা পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক উন্নতি না হওয়ায় গতকাল বুধবার রাতে লকডাউন আরও সাত দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বর্ধিত এই লকডাউন চলবে ২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত।

আজ দুপুরে নগরের তালাইমারী এলাকায় একটি চেকপোস্টে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে, চেকপোস্টে পুলিশ কড়াকড়ি ভূমিকায় রয়েছে। গাড়ির যাত্রীদের আটকে প্রশ্ন করছে। উত্তর সন্তোষজনক হলে কেউ ছাড় পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। আর যারা ছাড়া পাচ্ছে না, তারা পায়ে হেঁটে চেকপোস্ট পার হয়ে আবার গাড়িতে উঠছে। এই এলাকায় চেকপোস্টের দায়িত্বে আছে নগরের মতিহার থানা। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পুলিশ চেষ্টা করছে শহরের দিকে যাতে লোকজন, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরবাইক, প্রাইভেট কার প্রবেশ না করে। সে জন্যই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশ একটু সরে যেতেই অটোরিকশাগুলো ঢুকে পড়ে। মানুষের কত যে অজুহাত। এ ছাড়া অটোরিকশাগুলো চেকপোস্ট দিয়ে না এসে পদ্মার ধারের বাঁধ দিয়ে নগরে প্রবেশ করে। সেখানে আজ তিনি ছিলেন।

অনেকে চেকপোস্ট হেঁটে পার হয়ে গাড়িতে উঠছেন। বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরের তালাইমারী এলাকায় রুয়েটের সামনে
প্রথম আলো

তালাইমারী চেকপোস্ট পায়ে হেঁটে পার হয়ে একটি অটোরিকশাতে উঠছিলেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার আল-আমিন হোসেন। তিনি সকালে অটোরিকশায় রাজশাহী নগরে এসেছিলেন। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, খুব সকালের দিকে তিনি একটি প্রয়োজনীয় কাজে নগরে এসেছিলেন। সকালের দিকে তাঁকে নগরে প্রবেশ করতে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু দুপুরের পর পুলিশ চেকপোস্টে কড়া অবস্থায় আছে। তাই তিনি দুটি রিকশা বদল করে তালাইমারী পার হয়েছেন। এখানেও তিনি চেকপোস্ট পার হয়ে গাড়িতে উঠলেন। একইভাবে সেখানে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি অটোরিকশায় কয়েকজন উঠলেন।

তালাইমারী চেকপোস্ট পার হয়ে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বেশির ভাগ সময় ২০ থেকে ২৫টি অটোরিকশা ও রিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। এগুলোতে নগরের শেষ সীমানা কাটাখালি পৌরসভার আগ পর্যন্ত যাওয়া যায়। চালকেরা ভাড়া আদায় করছেন অতিরিক্ত। আবদুর সবুর নামের এখানকার একজন অটোরিকশাচালক বলেন, লকডাউনে তাঁদের গাড়িগুলোর ব্যাটারি ‘ডাউন’ হয়ে যায়। প্রতিদিন না চালালে আর প্রতিদিন চার্জ না করলে তাঁদের ব্যাটারির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। তা ছাড়া তাঁদের বাড়তি কোনো সঞ্চয় নেই যে, তা নিয়ে ঘরে বসে থাকবেন। তিনি আরও বলেন, তাঁরা জানেন করোনার পরিস্থিতি খারাপ। কিন্তু তাঁদের তো পেট-সংসার আছে। তাঁরা পুলিশের গতিবিধি লক্ষ রেখে অটোরিকশা নিয়ে সকালে বের হন। অলিগলি দিয়ে তাঁরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছান।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, নগরে মানুষের আনাগোনা কমাতে পুলিশ এখন থেকে আরও কঠোর হবে। নগরে ভ্রাম্যমাণ টহল পুলিশ বাড়ানো হচ্ছে।