অতিরিক্ত হাসিল আদায়, হাটে ধান বেচাকেনা বন্ধ, ফিরে গেলেন কৃষকেরা
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে ধান ব্যবসায়ীরা ধান বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন। ফলে আজ শনিবার উপজেলার নওয়াপাড়া ধানহাটে অনেক কৃষক ধান বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেছেন।
উপজেলার নওয়াপাড়ায় শনি ও মঙ্গলবার সপ্তাহে দুই দিন ধানের হাট বসে। বোরো মৌসুমে এ হাটে আট থেকে নয় হাজার মণ ধান কেনাবেচা হয়। এ হাটে ৩০ জনের মতো ধান ব্যবসায়ী রয়েছেন। কয়েক বছর ধরে নওয়াপাড়া পৌরসভা এখানে খাস আদায়ের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান বিক্রির খাজনা আদায় করত। এ বছর পৌরসভা দরপত্রের মাধ্যমে ধানহাটের ইজারাদার নির্ধারণ করে। এবার হাবিব স্টোরের লাইসেন্স ব্যবহার করে হাটটির ইজারা পেয়েছেন খন্দকার ইমরান হোসেন। আজ দুপুরে প্রথম তিনি হাসিল আদায় করতে নওয়াপাড়া ধানহাটে যান।
ধান ব্যবসায়ীরা বলেন, আজ সকাল আটটা থেকে নওয়াপাড়া ধানহাটে ধান কেনাবেচা শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে ইজারাদার হাটে এসে কৃষকদের কাছ থেকে ধানের মণপ্রতি ১২ টাকা এবং ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১২ টাকা মোট ২৪ টাকা করে আদায়ের চেষ্টা করেন। এর পর থেকে তাঁরা ধান কেনাবেচা বন্ধ করে দেন। এতে অনেক কৃষক ধান বিক্রি করতে পারেননি। তাঁরা ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
নওয়াপাড়া বাজার আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন গাজী বলেন, ‘আমরা সব আড়তদার মিলে দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভা থেকে ধানহাটটি ইজারা নিয়ে আসছি। আমরা এ পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে কোনো হাসিল না নিয়ে আড়তদারেরা মিলে পরিশোধ করি। হঠাৎ এ বছর পয়লা বৈশাখ থেকে আড়তদারদের বাইরে খন্দকার ইমরান হোসেন নামের একজনের নামে হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। ওই ইজারাদার তাঁর লোকজন নিয়ে আজ হাটে এসে দাবি করেন, প্রতিমণ ধানে কৃষক ও আড়তদার প্রত্যেকে ১২ টাকা করে মোট ২৪ টাকা হারে খাজনা দিতে হবে। যেহেতু কৃষকদের কাছ থেকে কোনো হাসিল নেওয়া হয় না, তাই এত টাকা সেটা দেওয়া আড়তদারদের পক্ষে সম্ভব না। তাই আমরা হাসিল কম নেওয়ার জন্য দাবি করেছি। কিন্তু ইজারাদার তা মানেননি। আমরা নিরুপায় হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমিতির সভাপতি রেজাইল হোসেন বিশ্বাসের সঙ্গে আলোচনা করে ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।’
আমরা খাজনা কম নেওয়ার জন্য দাবি করেছি। কিন্তু ইজারাদার তা মানেননি। আমরা নিরুপায় হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমিতির সভাপতি রেজাইল হোসেন বিশ্বাসের সঙ্গে আলোচনা করে ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।
আজ দুপুরে ধানহাট ঘুরে দেখা যায়, আড়তদারেরা আড়ত বন্ধ করে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো ক্রেতা নেই। কৃষকেরা ধান নিয়ে বসে আছেন। অনেকে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ধান বিক্রি করতে আসা উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামের কৃষক আবদুল গফুর বলেন, ‘আমি ধান বিক্রি করে ধান কাটার শ্রমিকের টাকা দেব। ঈদের কেনাকাটা করব। কিন্তু কেনাবেচা বন্ধ হওয়ায় হাটে ধান বিক্রি করতে না পেরে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’
ধান ব্যবসায়ীরা চার্ট অনুযায়ী ইজারা দিতে চাননি। তাঁদের সঙ্গে বসতে চেয়েছি। ইজারা কম নিতে চেয়েছি। কিন্তু তাঁরা না বসে ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে ইজারাদার খন্দকার ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি পৌরসভা থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধানহাটের ইজারা পেয়েছি। কৃষক প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) ধান বিক্রি করলে তাঁর কাছ থেকে ১২ টাকা এবং ধান ব্যবসায়ী ধান কেনার পর তা বিক্রি করলে তাঁর কাছ থেকে ১২ টাকা হিসাবে ইজারা নেওয়া হবে। আজ দুপুরে প্রথম আমি পৌরসভার ইজারার এ চার্ট অনুসারে কৃষকদের কাছ থেকে হাসিল আদায় শুরু করি। দুজন কৃষকের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের পর তা ফেরতও দিয়েছি। কিন্তু ধান ব্যবসায়ীরা চার্ট অনুযায়ী ইজারা দিতে চাননি। তাঁদের সঙ্গে বসতে চেয়েছি। ইজারা কম নিতে চেয়েছি। কিন্তু তাঁরা না বসে ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।’
ইমরান হোসেন বলেন, নওয়াপাড়া ধান ব্যবসায়ীরা আগে পৌরসভা থেকে হাট ইজারা নিতেন। তাঁরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিমণ ধানে এক থেকে দেড় কেজি করে বেশি নিতেন। এক কেজি ধানের দাম কুড়ি টাকা। কিন্তু তাঁরা দেখাতেন কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা নিচ্ছেন না। পৌরসভার নির্ধারিত খাজনা এর চেয়ে অনেক কম। তাঁদের সমস্যাটা এখানে। এ জন্য তাঁরা আজ কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেননি।
নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র সুশান্ত দাস বলেন, ‘ধান ব্যবসায়ীদের ধান কেনাবেচা বন্ধ রাখার বিষয়টি জেনেছি। আমরা ইজারাদারকে কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত খাজনা মণপ্রতি ১২ টাকার পরিবর্তে অর্ধেক (৬ টাকা) আদায় করতে বলেছি। আগামী হাটবার যথারীতি হাট বসবে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’