অতীতে আ.লীগের ‘বিদ্রোহী’ হওয়ায় বাদ দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী

আসন্ন মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন আটজন। যাচাই-বাছাই শেষে তার মধ্যে ছয়টি আবেদন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে অংশ নেওয়ায় বাদ পড়েছেন মেয়র পদে দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। মাগুরা পৌর ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য মাগুরা পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে গত শুক্রবার পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। সেখানে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেন আটজন।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুন্সী রেজাউল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান মেয়র খুরশিদ হায়দার, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজসেবা সম্পাদক রানা আমীর ওসমান, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাখারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সোহেল পারভেজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তপন কুমার রায় ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক–বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ অতীতে কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে অংশ নিলে তাঁর আবেদন যেন না পাঠানো হয়।
মো. বাকি ইমাম, সভাপতি, মাগুরা পৌর আওয়ামী লীগ

জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের দুজন শীর্ষস্থানীয় নেতা জানিয়েছেন, যাচাই-বাছাই শেষে রোববার ছয়জনের আবেদনপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বাদ পড়া দুজন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজসেবা সম্পাদক রানা আমীর ওসমান ও সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) পৌর মেয়র তপন কুমার রায়।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, রানা আমীর ২০১৬ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন। একইভাবে তপন কুমার রায় ২০১৫ সালের মার্চে মাগুরা-১ আসনের সংসদ উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আবদুল ওয়াহহাবের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে হেরে যান। এ কারণে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী রানা আমীর ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জীবদ্দশায় কখনোই নৌকার বিরোধিতা করেননি। জেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী থাকলেও নৌকা প্রতীক ছিল না। তা ছাড়া সে সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছিল দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্যরা প্রার্থী হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। ওই নির্বাচনের জন্য তাঁকে দল থেকে কখনো কারণ দর্শানোর একটি চিঠিও দেওয়া হয়নি। রানা আমীর অভিযোগ করেন, মাগুরার আওয়ামী লীগ একটি পক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেই পক্ষের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীদেরই প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে।

বাদ পড়া আরেকজন তপন ঠাকুর জানান, তিনি ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তারপর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। তাই তিনি বিদ্রোহী নন।

মাগুরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বাকি ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী আবেদন জমা দিয়েছিলেন। জেলা ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সমন্বয়ে পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তাঁদের বিষয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ অতীতে কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে অংশ নিলে তাঁর আবেদন যেন না পাঠানো হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী দুজনের আবেদনপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি।