অধিক উচ্চতার জোয়ারে বিপদে বন্য প্রাণীরা

শুধু ঝোড়ো হাওয়া সুন্দরবনের জন্য বিপদ নয়। অতি উচ্চতার জোয়ার এবং জলোচ্ছ্বাসও বনের প্রাণীদের বিপদে ফেলছে।

বরগুনার পাথরঘাটার সংরক্ষিত বন হরিণঘাটা থেকে জোয়ারের তোড়ে টিকতে না পেরে লোকালয়ে চলে আসা একটি হরিণশাবক। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস গত ২৬ মে ভারতের ওডিশায় আঘাত হানে। তার আগের দিন রাতের কথা। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি, সঙ্গে বাতাস। অধিক উচ্চতার জোয়ারের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল উপকূলে। জোয়ারের তোড় থেকে রক্ষা পেতে বঙ্গোপসাগর তীরের সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির বনকর্মীরা আগেই আশ্রয় নিয়েছিলেন পাশের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে। হঠাৎ আশ্রয়কেন্দ্রের নিচে ছোট্ট এক শাবককে নিয়ে সাঁতরে এসে উঠল দুটি চিত্রল হরিণ। হরিণশাবকটির বয়স তিন-সাড়ে তিন মাস হবে। জোয়ারের তোড়ে সাঁতরে আসার পর যখন নিরাপদে পৌঁছায়, তখন থরথর করে কাঁপছিল শাবকটি। মা হরিণটিও সন্ত্রস্ত। তবু শাবকটিকে পরম মমতায় গা চেটে দিচ্ছিল। ওই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেছিলেন এক বনরক্ষী। ভিডিওটি দেখে বোঝা যায়, অধিক উচ্চতার জোয়ারের তাণ্ডবে ভালো নেই দেশের উপকূলের বন্য প্রাণীরা।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং আগের বছরের আম্পান থেকে আমরা যে ইঙ্গিতটি পেলাম, সেটি হচ্ছে শুধু ঝোড়ো হাওয়া সুন্দরবনের জন্য বিপদ নয়। অতি উচ্চতার জোয়ার এবং জলোচ্ছ্বাসও সুন্দরবনকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছে। আর এ ধরনের জোয়ারে ভেসে যাওয়া বনের প্রাণীর প্রকৃত হিসাবও বের করা যাবে না। কাজেই এ ধরনের জোয়ার মোকাবিলায় সুন্দরবনের ভেতরে প্রাণীদের আশ্রয়ের জন্য উঁচু ডিবি তৈরি করার পাশাপাশি মিঠাপানি, খাবারের সংস্থান বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট উচ্চ জোয়ারের পানিতে এবার সুন্দরবনে বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ২৬ মে বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত তিনটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে লোকালয়সংলগ্ন বলেশ্বর নদ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি হরিণের পেটে বাচ্চাও ছিল। জলোচ্ছ্বাস ও পূর্ণিমার অতিরিক্ত জোয়ারে হরিণ ছাড়াও সুন্দরবনে অন্য আরও বন্য প্রাণী মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু সুন্দরবন নয়, সংলগ্ন পাঘরঘাটার হরিণঘাটা, রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ, নোয়াখালীর নিঝুমদ্বীপসহ উপকূলের সংরক্ষিত বন থেকে আরও বেশ কয়েকটি হরিণ জোয়ারের তোড়ে লোকালয়ে চলে এসেছিল। পাথরঘাটায় কুকুরের কামড়ে মারা যায় আরও একটি হরিণ। বেশ কয়েকটি জীবিত উদ্ধার হলেও কী পরিমাণ হরিণ বনের বাইরে এসেছে, তার নিশ্চিত তথ্য নেই।

একইভাবে বিপদে আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল বরগুনার টেংরাগিরির জীববৈচিত্র্য। নিশানবাড়িয়া ও সখিনা দুটি বিট নিয়ে এই বনের আয়তন ১০ হাজার ৬৪৭ একর।