অনন্ত হত্যা মামলায় সাক্ষী অনুপস্থিত, পেছাল সাক্ষ্য গ্রহণ

ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ
ফাইল ছবি

সাক্ষী অনুপস্থিত থাকায় সিলেটে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আজ মঙ্গলবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল। সাক্ষীরা অনুপস্থিত থাকায় আদালত আগামী ৬ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে ১০ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য তারিখে সাক্ষ্য দিয়েছেন অনন্তের ভগ্নিপতি আইনজীবী সমরবিজয় শেখর। তিনি আলোচিত এ মামলায় ১৯তম সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন। এ পর্যন্ত ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। বাকি ১০ জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিন সাক্ষী রয়েছেন। এই তিনজন হচ্ছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন পরিদর্শক ও সিআইডির তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।  

আগামী ৬ এপ্রিল এই সাক্ষীরা যাতে সাক্ষ্য দেন, সে জন্য ট্রাইব্যুনালকে বিশেষভাবে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের রাতে অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হচ্ছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের মধ্যে ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ছাড়া বাকি আসামিরা পলাতক।