‘অনন্তের খুনিরা বিজ্ঞানের খুনি’

অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা

‘বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখিই ছিল অনন্ত বিজয় দাশের ধ্যানজ্ঞান। তাঁর লেখালেখি কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ছিল না। বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তাভাবনা-যুক্তি স্বাধীনভাবে প্রকাশে দৃঢ় ছিলেন। এই দৃঢ়তাকে থামিয়ে দিতেই পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। অনন্তের খুনিরা বিজ্ঞানের খুনি। বিচার না হলে, খুনিরা শাস্তি না পেলে ভবিষ্যতে বিজ্ঞান চর্চা ও লেখালেখি ঝুঁকিতে পড়বে।’

সিলেটে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার একজন সাক্ষী হিসেবে তাঁর ভগ্নিপতি আইনজীবী সমর বিজয় সী শেখর সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আদালতকে এ কথা বলেছেন। আজ বুধবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল। মামলার কারাবন্দী দুই আসামির উপস্থিতিতে সমর বিজয় সী শেখর মামলার ১৯তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লব ২৩ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

আজ বুধবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল। তাঁর ভগ্নিপতি আইনজীবী সমর বিজয় সী শেখর আদালতে আজ সাক্ষ্য দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। বাকি ১০ জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন সাক্ষী রয়েছেন। এই তিনজন হচ্ছেন সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন পরিদর্শক ও সিআইডির তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। ২৩ মার্চ এ তিনজনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের দিন রাতে অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হচ্ছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

আসামিদের মধ্যে ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক। ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আজ ১৯তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণকালে কারাবন্দী আবুল খায়েরকে সিলেট কারাগার থেকে ও শফিউর রহমান ফারাবীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।