অনলাইন দরপত্রের তথ্যও এবার ফাঁস

ইজিপি নিয়ন্ত্রণকারী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিপিটিইউ। তারা বলছে, ইজিপির তথ্য ফাঁস হওয়া সম্ভব নয়।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণে অনলাইনে (ইজিপি) দরপত্র কেনাবেচার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ছাত্রী হল নির্মাণে ইজিপির মাধ্যমে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। দরপত্র ক্রয়কারী ঠিকাদারেরা বলছেন, তথ্য ফাঁস হওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা ও চরমপন্থী সংগঠনের নেতাদের পরিচয় দিয়ে তাঁদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

জানতে চাইলে গতকাল রোববার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবরটি আমিও শুনেছি, দেখেছি ও জেনেছি। জানার পর বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে মৌখিক ও খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের আর কী করার আছে!’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল কার্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেগা প্রকল্পের ৫৩৭ কোটি টাকার কাজ চলমান। দুটি আবাসিক ছাত্রী হল নির্মাণের জন্য গত ১৪ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ইজিপির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুটি হল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা। আজ সোমবার বেলা দুইটায় ওই দুটি ইজিপি দরপত্র খোলার কথা। তারপর সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পাওয়ার কথা।

কিন্তু সেই দুটি দরপত্রে অংশ নেওয়া আবেদনকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা ইজিপি থেকে ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, কয়েক দিন ধরে একটি চক্র দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইজিপি দরপত্রে আবেদনকারী ঠিকাদারদের তালিকা বের করেছে চক্রটি।

নাম প্রকাশ করার না শর্তে আরেক ঠিকাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজিপির মাধ্যমে দরপত্র কেনা হয়েছে। কিন্তু কেনার পর সেই নাম কীভাবে ফাঁস হলো, এটা বোধগম্য হচ্ছে না। ইজিপিতেও যদি তথ্য ফাঁস হয়, তাহলে এটা আতঙ্কের বিষয়।’ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তাঁকে দুজন প্রভাবশালী নেতা ফোন করে দরপত্রে অংশ নিতে নিষেধ করেছেন, বিষয়টি সমঝোতার প্রস্তাবও দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের পরিচালক এইচ এম আলী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি এবং উপাচার্যও জানেন। এমনটি জানার পর শনিবার উপাচার্য নিজে শিক্ষামন্ত্রী, সিপিটিইউসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে জরুরিভাবে যোগাযোগ করে অবগত করেছেন।’

আর উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘শর্ষের মধ্যে ভূত আছে কি না, সেটা আমার জানা নেই। ইজিপির সবকিছু আইএমইডির (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) নিয়ন্ত্রণে। এ ব্যাপারে সেখানে দুবার কথা বলেছি।’

আইএমইডির অধীনে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিট (সিপিটিইউ) ইজিপির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়ে সিপিটিইউর মহাপরিচালক সোহেলুর রহমান চৌধুরীর দাবি, সিপিটিইউ থেকে ইজিপির তথ্য ফাঁস হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিষয়টি আমাদের কাছেও এসেছে। আমরা আমাদের কারিগরি কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠিয়েছি। এভাবে ফাঁস করা আদৌ সম্ভব কি না, তারা বিষয়টি দেখছে।’