অনির্দিষ্টকালের জন্য রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ

শিমুলিয়া–কাঁঠালবাড়ি নৌপথে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে শুধু ছোট দুটি ফেরি দিনে চলবে। এর মূল কারণ নাব্যতা–সংকট হলেও পদ্মায় তীব্র স্রোত ও পদ্মা সেতুর নিরাপত্তাজনিত কয়েকটি বিষয়ও রয়েছে। বিকল্প হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথটি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কাঁঠালবাড়ি–শিমুলিয়া নৌপথে আজ থেকে রাতে বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল। দিনেও চলবে মাত্র দুটি ফেরি। আজ শনিবার সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে।প্রথম আলো

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে নদীতে ভয়াবহ নাব্যতা–সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে হলেও জরুরি প্রয়োজনে শুধু ছোট দুটি ফেরি দিনে চলবে।

আজ দুপুরে বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল আলিম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে আজ সকালে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সন্ধ্যার পর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।

বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে যেকোনো সময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে ফেরি চলাচল। নৌপথে এই অবস্থার জন্য নাব্যতা–সংকট মূল কারণ হলেও পদ্মায় তীব্র স্রোত ও পদ্মা সেতুর নিরাপত্তাজনিত কয়েকটি বিষয়ও রয়েছে। তাই যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের বিকল্প নৌপথ হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথটি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

এদিকে নাব্যতা–সংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় ঘাটের উভয় পারে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। ফলে এই নৌপথে আসা যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

পবিত্র ঈদুল আজহার পর থেকেই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। গেল সপ্তাহ ধরে নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের চ্যানেলের মুখে ভয়াবহ নাব্যতা–সংকট দেখা দেয়। আজ ভোররাতে কাঁঠালবাড়িগামী রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে চ্যানেলের ডুবোচরে আটকা পড়ে। এরপর থেকে নৌপথে সব কটি বড় ও মাঝারি আকারের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ফেরিঘাট সূত্র জানায়, ঈদুল আজহার পর থেকেই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। নাব্যতা–সংকট ও তীব্র স্রোতের কারণে কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই প্রায় রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হতো। গেল সপ্তাহ ধরে নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের চ্যানেলের মুখে ভয়াবহ নাব্যতা–সংকট দেখা দেয়। প্রতিটি ফেরি দুর্ঘটনা এড়াতে সীমিত পরিসরে যানবাহন বহন করে পদ্মা পারাপার হতো। প্রায় সময় রো রো ও ডাম্ব ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে মাঝারি আকারের কে-টাইপ ফেরি ও ছোট দুটি ফেরি চালু ছিল। আজ ভোররাতে কাঁঠালবাড়িগামী রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে চ্যানেলের ডুবোচরে আটকা পড়ে। এরপর থেকে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে চলাচলকারী ১৫টি ফেরির মধ্যে সব কটি রো রো ফেরি ও মাঝারি আকারের কে-টাইপের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে জরুরি প্রয়োজনে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য দুটি ছোট ফেরি চালু রাখা হয়েছে।

খুলনা থেকে ছয় দিন হলো ঘাটে বসে আছি। এখন ঘাটের লোক বলতাছে, দৌলতদিয়া ঘাটে যেতে। চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য ছয় দিন বেকার বসে দুর্ভোগ পোহালাম। এখন আবার উল্টো পথে যাওয়া অনেক কষ্ট।
বাসার খন্দকার, কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আটকা পড়া পণ্যবাহী ট্রাকের চালক
কাঁঠালবাড়ি–শিমুলিয়া নৌপথে রাতে বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল। দিনেও চলবে মাত্র দুটি ফেরি। আজ শনিবার সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে।
প্রথম আলো

এ সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন কর্মকর্তা আহমদ আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ সন্ধ্যার পর থেকে রাতে আর কোনো ফেরি চলবে না। মূল সমস্যা হচ্ছে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে চর ভেঙে নৌপথটি ফিল্ড (সমান) হয়ে গেছে। ফলে ফেরিগুলো ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে রো রো ফেরি একটিও চলতে পারছে না। মাঝারি আকারের কে-টাইপের ফেরিও চলতে পারবে না। জরুরি প্রয়োজনে শুধু ছোট দুটি ফেরি দিনে চলবে।

সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এটি প্রাকৃতিক সমস্যা। এই সময়ে পদ্মার পানির সঙ্গে যে পরিমাণে পলিমাটি আসে, তা ড্রেজিং করে অপসারণ করা সম্ভব নয়। তবু বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগ খননকাজ চলমান রেখেছে। তবে কবে নাগাদ এ সংকট কাটবে তা বলা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কাঁঠালবাড়ি ঘাটেই আটকা পড়েছে ছয় শতাধিক যানবাহন। ফেরি না পেয়ে যাত্রীরা লঞ্চ ও স্পিডবোটে ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পারাপার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরা। পদ্মা পারাপারের অপেক্ষায় সাত থেকে আট দিন ধরে টার্মিনালে আটকা পড়ে আছে ট্রাকগুলো। শিমুলিয়া ঘাটেও একই অবস্থা। উভয় পারে ঘাট কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্য সব যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিককে হ্যান্ড মাইকের সাহায্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথটি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।

যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যেকোনো সময় দিনেও ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় ঘাটে আটকা পড়া সব যানবাহন পারাপার করা সম্ভব নয়। তাই আটকে পড়া যানবাহনগুলোকে আমরা বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করতে বলেছি।
মো. আবদুল আলিম, ব্যবস্থাপক, কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট, বিআইডব্লিউটিসি

ঢাকা থেকে মাদারীপুর আসা যাত্রী সাইফুল কাজী বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছি। এখানে এসে দেখি ফেরি নেই। কখন আসবে, কখন ফেরিতে উঠতে পারব—তা কেউ বলতে পারছে না। উল্টো পাটুরিয়া হয়ে যাওয়ার কথা বলছে। ওই রুটে গেলে তিন গুণ পথ। এভাবে চললে আমাদের দুর্ভোগের আর শেষ নেই।’

কাঁঠালবাড়ি ৪ নং টার্মিনালে আটকা পড়া পণ্যবাহী ট্রাকের চালক বাসার খন্দকার বলেন, ‘খুলনা থেকে এসে ছয় দিন ধরে ঘাটে বসে আছি। এখন ঘাটের লোক বলতাছে, দৌলতদিয়া ঘাটে যেতে। চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য ছয় দিন বেকার বসে দুর্ভোগ পোহালাম। এখন আবার উল্টো পথে যাওয়া অনেক কষ্ট।’

এ সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা-দুইটা ফেরি চলছে। রাতে সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। তবে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যেকোনো সময় দিনেও ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় ঘাটে আটকা পড়া সব যানবাহন পারাপার করা সম্ভব নয়। তাই আটকে পড়া যানবাহনগুলোকে আমরা বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করতে বলেছি।’