অনুমতি ছাড়াই উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের সম্মেলন, সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি

নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিশাল প্যান্ডেল করে উপজেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুমোদন ছাড়াই ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় এ সম্মেলন শুরু হয়। তবে সকাল থেকে নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে ওই চত্বরে উপস্থিত হতে শুরু করেন।

সম্মেলনের কারণে সেখানে থাকা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সেবাগ্রহীতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সেবাগ্রহীতাসহ উপজেলা সদরে আসা অনেকেই।

এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর অনুমোদন ছাড়াই উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়, যুব উন্নয়ন কার্যালয়, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্মেলনের জন্য চত্বরে বিশাল প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। পরিষদের প্রধান ফটক ঘিরে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পরিষদের মাঠজুড়ে বিশালাকার প্যান্ডেল নির্মাণ করায় ইউএনওর কার্যালয়সহ সরকারি অফিসগুলোর প্রবেশমুখ ঢাকা পড়েছে। সম্মেলনের কারণে উপজেলা পরিষদ চত্বরে থাকা শিক্ষা অফিস, হিসাবরক্ষণ অফিস, পরিসংখ্যান অফিস, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল। এ ছাড়া সম্মেলনের উদ্বোধনস্থলসংলগ্ন আনসার ও ভিডিপির কার্যালয়েও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় উপজেলার দূরদূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা অনেকেই ফিরে গেছেন।

নাসিরনগর উপজেলার প্রত্যন্ত চাতলপাড় ইউনিয়ন থেকে আসা একজন স্কুলশিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজে উপজেলা সদরে এসেছিলাম। এসে দেখি ভেতরে বিশাল প্যান্ডেল করে সম্মেলন করা হচ্ছে। মাইকের তীব্র আওয়াজ। মঞ্চের একেবারে কাছে শিক্ষা অফিস। সেখানে গিয়ে অফিসকক্ষ তালাবদ্ধ পেয়েছি। কাজের জন্য এত দূর থেকে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে আসা ধরমণ্ডল ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাবার পেনশনের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য হিসাবরক্ষণ অফিসে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম ওই অফিসসহ আশপাশের কয়েকটি অফিস তালাবদ্ধ।’

বেলা তিনটায় অনুষ্ঠান শুরুর পর উপজেলা পরিষদের পুরো চত্বরের নিয়ন্ত্রণ নেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। বেলা সাড়ে তিনটার পর থেকে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নিজ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাসিরনগরের ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সম্মেলনের বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে কেউ কোনো ধরনের অনুমতি নেয়নি।’ সরকারি দপ্তরগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদে নেই। দাপ্তরিক কাজে বাইরে আছি। কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারব না।’

অনুমতির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও সম্মেলনের সভাপতি নাছির উদ্দিনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে নাছির উদ্দিন দাবি করেন, তাঁরা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। সরকারি কার্যালয়গুলোর কার্যক্রমে বিঘ্ন না ঘটিয়ে সম্মেলন করার শর্তে কর্তৃপক্ষ তাঁদের অনুমতি দিয়েছে।

উপজেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় এক দশকের বেশি সময় পর উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর উদ্বোধক হিসেবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য উপস্থিত হয়েছেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন স্থানীয় সাংসদ বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। অন্যদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন আহমেদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন।