অনৈতিক সম্পর্কের জেরে ব্যবসায়ীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা

আদালত
প্রতীকী ছবি

লালমনিরহাট শহরের মাঝাপাড়া এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবদুল জলিলকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জলিলের স্ত্রীর সঙ্গে এক ওষুধ ব্যবসায়ীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ওই ওষুধ ব্যবসায়ীকে বিয়ে করার জন্য জলিলকে হত্যা করেন তাঁর স্ত্রী। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন ওই ওষুধ ব্যবসায়ী । এ ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁরা গতকাল বুধবার বিকেলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবদুল জলিল ২১ জুলাই তাঁর শহরের বাড়িতে খুন হন। তাঁর গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছে। ২২ জুলাই তাঁর স্ত্রী মমিনা বেগম (২৫) বাড়িতে খবর না দিয়েই তাঁর লাশ দাফন করেন। জলিলের স্বজনেরা পরে জানতে পারেন, গোসল করানোর সময় লাশের মুখসহ কয়েকটি স্থান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। এ কারণে সন্দেহ হওয়ায় জলিলের ভাই আবদুর রশিদ এটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কি না, তা যাচাই করার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে ২৫ জুলাই আবেদন করেন।

পুলিশ প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে নিশ্চিত হয়, জলিল খুন হয়েছেন। ২৭ জুলাই আবদুর রশিদ এ ঘটনায় জলিলের স্ত্রী মমিনা বেগম, তাঁর প্রেমিক গোলাম রব্বানীসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলা হওয়ার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফা জামাল তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ মমিনা বেগম, গোলাম রব্বানীসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, মামলা হওয়ার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফা জামাল তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ মমিনা বেগম, গোলাম রব্বানীসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে মমিনা বেগম ও গোলাম রব্বানী কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবদুল জলিলকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁরা জলিলকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তারও বর্ণনা দেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহআলম জানান, প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ী জলিল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর মমিনা বেগম ও গোলাম রব্বানীকে বুধবার লালমনিরহাট আমলি আদালত-১-এ হাজির করা হয়। তাঁরা ওই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌসী বেগমের কাছে ১৬৪ ধারায় হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

মমিনা বেগম ও গোলাম রব্বানীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তিন মাস আগে মমিনা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় ওষুধ ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানীর কাছ থেকে ওষুধ কিনে আনা হয় এবং তাঁর পরামর্শে চিকিৎসা নেওয়া হয়। ওষুধ সরবরাহ ও চিকিৎসায় পরামর্শ দেওয়ার জন্য মমিনা বেগমের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন গোলাম রব্বানী। একপর্যায়ে মমিনা ও গোলাম রব্বানীর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তাই পথের কাঁটা আবদুল জলিলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈদুল আজহার দিন রাতে রান্না করা গোশতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে জলিলকে খাওয়ান মমিনা বেগম।

এরপর গোলাম রব্বানীর সহায়তায় মমিনা বেগম তাঁর স্বামী জলিলকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরদিন ভোরবেলা মমিনা বেগম তাঁর স্বামী  ঘুমের মধ্যে মারা গেছেন বলে কান্নাকাটি শুরু করেন। এরপর তাড়াহুড়া করে তিনি স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় লালমনিরহাট শহরের সাপটানা কবরস্থানে জলিলের লাশ দাফন করেন।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মারুফা জামাল বলেন, আদালতের নির্দেশ সাপেক্ষে ব্যবসায়ী আবদুল জলিলের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী মমিনা বেগম ও তাঁর প্রেমিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।