‘অন্ধের যষ্ঠি’ হারিয়ে দিশেহারা ওয়াসিম

একটি চায়ের দোকানে বসে নিজের দুর্দশার কথা শোনান অটোরিকশা চালক মো. ওয়াসিম (ডানে)। গতকাল মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ সদরের দিঘী দক্ষিণ পাড়া গ্রামে
প্রথম আলো

মো. ওয়াসিমের কান্নায় আড্ডারত সবাই চুপ হয়ে গেলেন। মানিকগঞ্জ সদরের দিঘী দক্ষিণপাড়া গ্রামের এক চায়ের দোকানের আড্ডায় অটোভ্যানের চালক ওয়াসিম তাঁর আকস্মিক দুর্দশায় পড়ার কথা বলছিলেন পরিচিতজনদের। ঋণের টাকায় যে ভ্যান কিনেছিলেন, গত সোমবার রাতে তা চুরি হয়ে গেছে। জীবিকার একমাত্র অবলম্বনটি হারানোয় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

ওয়াসিমের বাড়ি দিঘী ইউনিয়নের নতুন বসতি গ্রামে। সেখানে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। চায়ের দোকানে বসে ওয়াসিম তাঁর দুর্দশার কথা বলছিলেন গতকাল মঙ্গলবার রাতে।

প্রায় তিন বছর আগে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন ওয়াসিম। সেই টাকা দিয়ে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা (স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে অটো ভ্যান নামে পরিচিত) কেনেন। এই ভ্যান চালিয়ে দিনে গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা উপার্জন করতেন। সেই টাকায় সংসারের খরচ ও সুদসহ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হতো। পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখার খরচও।

তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৩) সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দুই ছেলের মধ্যে ফাহিম (৯) তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আর সিয়ামের বয়স প্রায় ৫। ওয়াসিম জানান, গত সোমবার রাত নয়টার দিকে দিঘী দক্ষিণ পাড়া গ্রামের একটি গ্যারেজে তাঁর ভ্যানটি চার্জে দিয়ে বাড়ি চলে যান। মঙ্গলবার সকালে এসে দেখেন তাঁর ভ্যানটি নেই। গ্যারেজের মালিক আবদুল মজিদের স্ত্রী বিউটি আক্তার তখন তাঁকে জানান, ভোরে গ্যারেজের তালা খোলা দেখেছেন তিনি।

ওয়াসিম বলেন, করোনার পর থেকে তাঁর আয়রোজগার কমে গেছে, যা আয় হয়, তা দিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে দিন চলছিল। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভ্যানটি চুরি হওয়ায় চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন তিনি। নতুন অটোরিকশা কেনার মতো টাকাও নেই। একপর্যায়ে অশ্রুভেজা চোখ নিয়ে ওয়াসিম বলেন, ‘এহন ঋণের ট্যাহাই দিমু কেমন? বউ-পোলাপান নিয়াই খামু কী?’

দিঘী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেহেনা বেগম বলেন, অটোরিকশা চালিয়েই ওয়াসিমের সংসার চলত। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বনটুকু চুরি হওয়ায় ওয়াসিম প্রকৃতপক্ষেই অর্থকষ্টে পড়েছেন।