অপরিকল্পিত খাল খননে রাস্তায় ধস, দুর্ভোগে মানুষ

নড়াইল সদর উপজেলার হাবাদ ইউনিয়নের চারটি বিলের কৃষিকাজে সেচসুবিধার জন্য খালটি পুনঃখনন করে চিত্রা নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী খালের উপরিভাগে ৪০ থেকে ৫০ ফুট এবং তলদেশ ১০ ফুট চওড়া করে খনন করা কথা। দরপত্রের নির্দেশ না মেনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে খালের উপরিভাগ ১৫ থেকে ১৬ ফুট এবং তলদেশ ১৪ থেকে ১৬ ফুট চওড়া করে কেটেছে।

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের গারোচোরা খাল অপরিকল্পিতভাবে পুনঃখনন করায় রাস্তা ভেঙে গেছে। সম্প্রতি তোলা ছবি।প্রথম আলো

গত জানুয়ারি মাসে নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের গারোচোরা থেকে চানপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করে পাউবো। কিন্তু ঠিকাদার অপরিকল্পিতভাবে এবং দরপত্রের নির্দেশনা না মেনে খাল খনন করায় খালের দুই পাড়সহ পাকা রাস্তা ভেঙে পড়েছে। এতে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খালটির ১ হাজার ৭০০ মিটার পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়। মেসার্স নাজমুল হক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ভরাট হয়ে যাওয়া খালে পানিপ্রবাহের সৃষ্টি ও খেতে সেচ দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিল পাউবো।

২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খালটির ১ হাজার ৭০০ মিটার পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়। মেসার্স নাজমুল হক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ভরাট হয়ে যাওয়া খালে পানিপ্রবাহের সৃষ্টি ও খেতে সেচ দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিল পাউবো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহাবাদ ইউনিয়নের চারটি বিলের কৃষিকাজে সেচসুবিধার জন্য খালটি পুনঃখনন করে চিত্রা নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী খালের উপরিভাগে ৪০ থেকে ৫০ ফুট এবং তলদেশ ১০ ফুট চওড়া করে খনন করা কথা। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, দরপত্রের নির্দেশ না মেনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে খালের উপরিভাগ ১৫ থেকে ১৬ ফুট এবং তলদেশ ১৪ থেকে ১৬ ফুট চওড়া করে কেটেছে। নদীর কাছাকাছি এলাকায় খালের মতো করে না কেটে সরু আকারে কাটা হয়েছে। এতে নদীর পানি খালে ঢুকতে পারছে না। অনেক স্থানে ঢালু না করে খাড়াভাবে খাল খনন করা হয়েছে। এতে এসব স্থানে দুই পাড়ের মাটি ধসে পড়ে বসতভিটা হুমকির মুখে পড়েছে; ভেঙে গেছে পৌরসভার পাকা রাস্তা।
গারোচোরা গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লুতফুন্নেছাসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খালের পাড় খাড়াখাড়িভাবে কাটায় পাশের বিভিন্ন স্থাপনাসহ পৌরসভার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এক পাশ ভেঙে যাওয়ায় রাতে ওই রাস্তা দিয়ে ভ্যান চালানো যায় না। অনেক সময় অন্য ভ্যানকে পাশ দিতে গেলে খাদে পড়ে যেতে হয়। এক সপ্তাহ আগে খাদে পড়ে গিয়ে নয়নপুর গ্রামের হরিপদ বিশ্বাস নামের একজন ভ্যানচালকের পা ভেঙে গেছে।
রোস্তম আলী, ভ্যানচালক, নয়নপুর গ্রাম, সদর উপজেলা, নড়াইল

ভ্যানচালক রোস্তম আলী জানান, এক পাশ ভেঙে যাওয়ায় রাতে ওই রাস্তা দিয়ে ভ্যান চালানো যায় না। অনেক সময় অন্য ভ্যানকে পাশ দিতে গেলে খাদে পড়ে যেতে হয়। এক সপ্তাহ আগে খাদে পড়ে গিয়ে নয়নপুর গ্রামের হরিপদ বিশ্বাস নামের একজন ভ্যানচালকের পা ভেঙে গেছে।
দলজিতপুর গ্রামের মিনু রহমান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে খাল কাটার জন্য গ্রামের অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রায় ৫ শতাংশ জমি এবং ৫০ হাজার টাকা দামের গাছ খালে কাটা পড়েছে। আমার মতো গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫ জন বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
খাল খননে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার এনামুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ ৪০ থেকে ৪৫ বছর সংস্কার না করায় খালের বেশির ভাগ অংশ ভরাটসহ বেদখল হয়ে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মেপে দেওয়া জায়গায় খাল খননের কাজ করেছি।’ তিনি দাবি করেন, ‘খাল কাটতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছি। ঠিকমতো খাল কাটতে পারিনি। এখানে কাজ করতে এসে আমার তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, প্রায় চার যুগ ভরাট খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকাবাসীর বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। এতে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।


নড়াইল পৌর মেয়র মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস জানান, খাল খননের পর পৌর এলাকার এক কিলোমিটার পাকা সড়ক ভেঙে পড়েছে। ভেঙে যাওয়া রাস্তাটি মেরামতের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাউবোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাউবো ভাঙা রাস্তার পাশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে কিছু বালুর বস্তা দিয়ে দায়সারাভাবে রাস্তা ভরাট করে। কয়েক দিনের মধ্যে তা আবার ভেঙে পড়ে। পাউবো অনেক স্থানে শুধু বাঁশের খুঁটি পুঁতে রেখেছে। সেখানে কোনো বালুর বস্তা দেওয়া হয়নি।