অবশেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি ও ভাষাসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আরিফ টিপু।ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গা, রাজশাহী নগর, ১৬ ডিসেম্বর
প্রথম আলো

অবশেষে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। আজ বুধবার সকালে রাজশাহী মহানগরের প্রাণকেন্দ্র সোনাদিঘির পাড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি ও ভাষাসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আরিফ টিপু।

জায়গাটি জেলা পরিষদের, এ জন্য আগের দিন জেলা পরিষদ সেখানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শহীদ মিনার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল। এ নিয়ে বিকেলে একটি সমঝোতা বৈঠকের কথা রয়েছে। তবে সেখানেই একটি প্রতীকী শহীদ মিনারে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন, ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেনসহ আরও অনেকে। প্রতীকী এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে ঢল নামে অসংখ্য মানুষের। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সেখানে সমাবেশ হয়।

সার্ভে ইনস্টিটিউটের এই জায়গাটি জেলা পরিষদের। সার্ভে ইনস্টিটিউট অন্যত্র স্থানান্তরের পর পরিত্যক্ত ভবনসহ জায়গাটি পড়ে আছে। সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্পে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু জেলা পরিষদ এই জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে আগ্রহী ছিল না। সেখানে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল।

এ খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে রাজশাহীবাসী। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবিতে কর্মসূচি পালন শুরু করেন। মাঠে নামেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন এবং সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশাও। তাঁরা বিজয় দিবসেই সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘোষণা দেন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার জেলা পরিষদ একটি বিশেষ সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারই হবে, তবে সেটি জেলা পরিষদের অর্থায়নে এবং ব্যবস্থাপনায়। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

এদিকে আজ সকালে ওই জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ফলক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাজশাহীতে এত দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছিল না। আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলো। দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে। শহীদ মিনার একটা আবেগের জায়গা। এখানে সভা-সমাবেশ হবে। মানুষ এসে তার মনের কথা বলবে। ঢাকায় যেমন বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তাঁর লাশ শহীদ মিনারে রেখে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়, তাঁকে শেষ বিদায় জানানো হয়, এখানেও তেমন হবে। দ্রুতই সবাইকে নিয়ে সভা করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় হাত দেব।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘জেলা পরিষদ এখন নিজেদের টাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কথা বলছে। কিন্তু টাকা তো চাইতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সে টাকা আগেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নœহতে আমরা দেব না। এটা আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় সিটি মেয়র মিটিং ডাকবেন। সাংসদ হিসেবে আমি এই মিটিংয়ে যাব। মাননীয় মেয়রের এই উদ্যোগকে আমি পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্থন করি। ভাষা আন্দোলনের সময় যাঁরা রাজশাহী কলেজে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন, তাঁরা আজ ২০২০ সালে এসেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য এখানে এসেছেন। তাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এখানে হবে, কেউ বাধা দিতে পারবেন না।’

এ নিয়ে বিকেলে রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।