অবশেষে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন চার চেয়ারম্যান প্রার্থী, ভোট হবে ইভিএমে

ইউপি নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

অবশেষে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চারজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। আজ মঙ্গলবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ওই প্রতীক বরাদ্দ দেন। এই তিন ইউনিয়নে ইভিএমে ভোট হবে।

বর্তমান সরকারের মেয়াদের তিন বছর পর ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনের সাংসদ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. তাজুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন হচ্ছে।

চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে উপজেলার ঝলম উত্তর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন পেয়েছেন আনারস প্রতীক, সরশপুরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার মজুমদার পেয়েছেন আনারস প্রতীক ও একই ইউপির জসিম উদ্দিন পেয়েছেন চশমা প্রতীক এবং লক্ষ্মণপুর ইউপির আবদুল বাতেন পেয়েছেন আনারস প্রতীক।

জানতে চাইলে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুঞ্জুরুল আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আজ তিন ইউনিয়নের চার চেয়ারম্যান প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই তিন ইউনিয়নে ইভিএমে ভোট হবে।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর ষষ্ঠ ধাপে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল। ৬ জানুয়ারি ছিল মনোনয়নপত্র বাছাই। ১৩ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। এতে ১১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৪০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৩৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। সবার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

১৩ জানুয়ারি চেয়ারম্যান পদে বাইশগাঁও ইউপির দুজন, লক্ষ্মণপুর, হাসনাবাদ ও সরশপুরে একজন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এতে করে ১১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছাড়া আর কোনো প্রার্থী ছিলেন না। ফলে ১১ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

এদিকে অভিযোগ ওঠে, তফসিল ঘোষণার পর কয়েকটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সন্ত্রাসী হামলা ও বাধার কারণে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। এরপর তাঁরা কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন করেন। ঢাকায় আগারগাঁও এলাকায় নির্বাচন ভবনের সামনে মানববন্ধনও করেন। এতে কাজ না হওয়ায় তাঁরা উচ্চ আদালতে রিট করেন। ১৩ জানুয়ারি আদালত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনার কপি পাওয়ার পর ২০ জানুয়ারি তাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। এতে চারজনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু চারজনকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। গতকাল সোমবার প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে চার চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে নূরুল হুদার কাছে আবেদন করেছেন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে মো. তাজুল ইসলাম চতুর্থবারের মতো কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হন। ওই বছর লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো ভোট হয়নি। দুই উপজেলার ছয়জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। ২০২০ সালে লাকসাম পৌরসভার মেয়র, নয়জন কাউন্সিলর ও তিনজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর বিনা ভোটে জয়ী হন। ২০২১ সালে লাকসাম উপজেলার পাঁচটি ইউপিতে ৬৫ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য বিনা ভোটে জয়ী হন। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১১ জন চেয়ারম্যান, ১২১ জন সাধারণ সদস্য ও ৩০ জন সংরক্ষিত সদস্য বিনা ভোটে জয়ী হন। কিন্তু আদালতের নির্দেশনায় ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ঝলম উত্তর, সরশপুর ও লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। এ ছাড়া বিপুলাসা ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য, তিনটি সংরক্ষিত সাধারণ সদস্য, ঝলম উত্তর ইউনিয়নের একটি ও মৈশাতুয়া ইউনিয়নের একটি সাধারণ ওয়ার্ডে ভোট হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লা জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, ধারাবাহিকভাবে ভোট দিতে না পারলে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। আদালতের নির্দেশে অন্তত তিনটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন, এটাও একধরনের সুখবর।