নড়িয়ার সেই তরুণী রোকিয়া আক্তারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবার উদ্যোগে স্বাস্থ্য বিভাগ ১ নভেম্বর থেকে তাঁর চিকিৎসা শুরু করেছে।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক গ্রামের মৃত আলম শেখের মেয়ে রোকিয়া আক্তারের বয়স ২০ বছর। কঙ্কালসার দেহের কারণে তিনি ৭-৮ বছরের শিশুর মতো দেখতে। ১৭ বছর ধরে অজানা এক রোগ নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। বাবা-মা বেঁচে না থাকায় এক চাচার আশ্রয়ে আছেন। জীবন কাটাতে হচ্ছে ভিক্ষা করে। প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়লে মেলে না চিকিৎসা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কোনো সহায়তা না পেয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে তাঁকে। এ নিয়ে ‘১৭ বছরেও চিকিৎসা জোটেনি মেয়েটির’ শিরোনামে গত ২৩ অক্টোবর প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর নড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির আল নাসিফের উদ্যোগে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম কোকিয়াকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জান্নাতুল নাইমা খানমের তত্ত্বাবধানে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মেয়েটি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তারা কারও নজরেই বিষয়টি আসেনি। গণমাধ্যমে খবর আসার পরই তাঁর চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁকে সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে।
চিকিৎসক জান্নাতুল নাইমা খানম বলেন, ‘মেয়েটিকে হাসপাতালে আনার সময় শারীরিকভাবে খুব দুর্বল ছিল। তাঁর শারীরিক সমস্যাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। সমস্যাগুলো হলো—জন্মগতভাবে অপুষ্টির শিকার, বয়স অনুযায়ী শারীরিক গঠন খাটো, পুষ্টিহীনতা, সারা শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ, দাঁতের গঠন অস্বাভাবিক, শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক, উচ্চমাত্রায় ডায়াবেটিস রয়েছে। সব কটির চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্ভব নয়। আমরা বর্তমানে ডায়াবেটিস, পুষ্টিহীনতা ও ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসা দিচ্ছি। তাঁকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
মেয়েটিকে হাসপাতালে আনার সময় শারীরিকভাবে খুব দুর্বল ছিল। তাঁর শারীরিক সমস্যাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। সব কটির চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্ভব নয়। তাঁকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গ্রামবাসী জানান, রোকিয়ার জন্ম ২০০০ সালে। ২০০৩ সালে তিনি জ্বর-ঠান্ডায় আক্রান্ত হন। এরপর দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগেন। ২০০৪ সালে মারা যান মা পিয়ারা বেগম। এরপর থেকে রোকিয়া আর কোনো চিকিৎসা পায়নি। পরিবারের সদস্যরাও জানতে পারেনি রোকিয়া কোন রোগে আক্রান্ত। তখন থেকেই তাঁর শারীরিক গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। দরিদ্র বাবা কোনো চিকিৎসা করাতে পারেননি। বসতবাড়িতে যেটুকু সম্পদ ছিল, তা–ও বিক্রি করতে হয়েছে। ২০১৬ সালে বাবা মারা যান। মানসিক প্রতিবন্ধী বোন সীমা আক্তার (২৪) ২০১০ সালে নিখোঁজ হন। এরপর অভিভাবকহীন রোকিয়ার আশ্রয় মেলে চাচার বসতঘরের বারান্দায়। কিন্তু তাঁর খাবারের জোগাড় হবে কীভাবে? বাধ্য হয়ে স্থানীয় কার্তিকপুর বাজার ও ডিঙ্গামানিক গ্রামে ভিক্ষা করতে শুরু করেন। বছরে দুই দফা অসুস্থ থাকেন রোকিয়া। শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ভোগেন। কিন্তু কোনো চিকিৎসা মেলে না।
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম রাজীব বলেন, মেয়েটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। তবে তাঁর পরিবারের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না।
নড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও তানভির আল নাসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েটি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তারা কারও নজরেই বিষয়টি আসেনি। গণমাধ্যমে খবর আসার পরই তাঁর চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁকে সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে।’
সমাজসেবার শরীয়তপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক কামাল হোসেন বলেন, অসুস্থ ও অসহায় ওই মেয়েটিকে ভাতা ও সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমাজসেবার উদ্যোগে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসা করা হবে।