অবসর কাটাতে কাঠ দিয়ে শিল্পকর্ম

করোনাকালে অসুস্থ মনিরুল ইসলামের ঘরে বসে সময় কাটছে শিল্পকর্মে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর শহরের সলেমানপুরে নিজ বাড়িতে
ছবি: প্রথম আলো

শারীরিক অসুস্থতার কারণে করোনাকালে বাড়ির বাইরে যেতে পারেননি কাজী মনিরুল ইসলাম। ঘরে বসে অবসর কাটাতে তাই হাতে তুলে নেন কাঠ আর কিছু যন্ত্রাংশ। সেগুলো নিয়ে ঠুক ঠুক করতে করতে তৈরি করেছেন জাহাজের প্রতিকৃতি। এরপর একে একে কাঠ খোদাই করে তৈরি করেছেন গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতি, পাখিসহ নানা শিল্পকর্ম।

মনিরুল ইসলাম ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর শহরের সলেমানপুর এলাকার বাসিন্দা। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও করোনাকালে তিনি পুরোদস্তুর শিল্পী হয়ে উঠেছেন। তাঁর তৈরি শিল্পকর্ম দেখে প্রশংসা করছেন স্থানীয় লোকজন।

মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কয়েক বছর আগে তাঁর শরীরে বাইপাস সার্জারি করাতে হয়েছে। এর আগে ব্যবসা করলেও বর্তমানে কৃষিকাজ নিয়ে আছেন। তাঁর ৩০ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এ ছাড়া বাড়ির পাশে বেশ কিছু জমিতে ফলদ ও বনজ গাছ রয়েছে। বাড়িতে একটি গরুর খামার রয়েছে। এগুলোর আয় দিয়েই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সংসার চলে। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

মনিরুল বলেন, তিনি কখনো শিল্পকর্ম চর্চা করেননি। চারুকলার ছাত্রও নন। তবে ছোটবেলা থেকেই কিছু একটা তৈরি করার আগ্রহ ছিল। কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় মনে হতো গাছের কাঠ ব্যবহার করে কিছু একটা করার কথা। মাঝেমধ্যেই কাঠ দিয়ে এটা-সেটা তৈরি করতেন।

এরপর করোনা শুরু হলে শারীরিক কারণে একেবারেই বাইরে যেতেন না। অবসর কাটাতে বাড়ির সঙ্গে থাকা একটি টিনশেডের চারপাশ ঘিরে কারখানা তৈরি করেন। একে একে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কিনে আনেন। কাঠের আড়ত আর নিজের বাগানের গাছের কাঠ দিয়ে শুরু করেন শিল্পকর্ম। প্রথমে একটি জাহাজ তৈরি করলে প্রতিবেশীরা খুব প্রশংসা করেছিলেন। তাঁর নিজেরও ভালো লাগায় আরও কিছু তৈরির শখ জাগে। এরপর একে একে কাঠ খোদাই করে তৈরি করেন খেজুরের রস সংগ্রহ করা গাছি, হাঁস, বক, ইগল, নৌকা, বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি, বংশীবাদকসহ নানা শিল্পকর্ম।

মনিরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টায় কাঠ আর যন্ত্র নিয়ে বসে যান তিনি। চলে বেলা দুইটা পর্যন্ত। এরপর সন্ধ্যা সাতটায় আবার কারখানায় বসেন। কাজ করেন রাত ১০টা পর্যন্ত। এভাবে তিনি দীর্ঘ করোনার সময় পার করেছেন। তিনি বলেন, শখ করে এই কাজ শুরু করলেও এখন এগুলো তিনি ঢাকায় প্রদর্শনীতে নিয়ে যেতে চান।

পাড়ার বাসিন্দা সুব্রত সরকার বলেন, মনিরুলের এই প্রতিভা অনেকেই জানতেন না। তাঁর তৈরি জিনিসগুলো সবাইকে মুগ্ধ করছে।