অবসরের দিনে সম্মান পেয়ে অভিভূত কনস্টেবল জেলাল

চাকরির শেষদিনে সুসজ্জিত গাড়িতে কর্মকর্তাদের আসনে বসিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় রাজশাহীর বাগমারা থানার কনস্টেবল জেলাল উদ্দিনকে। শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ লাইনসেপ্রথম আলো

পুলিশের কনস্টেবল জেলাল উদ্দিন তালুকদার। পুলিশের চাকরিতে ৩৯ বছর পূর্ণ করে আজ শুক্রবার ছিল তাঁর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার দিন। এই দিনে তিনি পুলিশ সুপারের উদ্যোগে সহকর্মী পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে পেলেন এক ব্যতিক্রমী সংবর্ধনা। চাকরিজীবনে সব সময় পুলিশ ভ্যানের পেছনের খোলা অংশে বসেই চলাচল করেছেন তিনি। তবে চাকরিজীবনের শেষ দিনে তাঁকে বসানো হলো গাড়ির সামনের আসনে, যেখানে কর্মকর্তারা বসেন। শুধু তা–ই নয়, গাড়িটি ফুল-বেলুন দিয়ে সাজানোও হয়। এভাবে সুসজ্জিত গাড়িতে করে আজ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁকে। এমন সম্মান পাওয়াতে অভিভূত এই পুলিশ সদস্য।

সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের জেলাল উদ্দিন তালুকদার ৩৯ বছর আগে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। সেই থেকে একই পদে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তিনি। সবশেষ গত বছরের ১৫ নভেম্বর যোগ দেন রাজশাহীর বাগমারা থানায়। এটিই ছিল তাঁর শেষ কর্মস্থল। আজ তিনি সরকারি নিয়মানুযায়ী এক বছরের অবসরোত্তর (পিআরএল) ছুটিতে যান। চাকরির শেষ দিনে সহকর্মীরা আজ বিশেষভাবে সম্মান জানান এই পুলিশ সদস্যকে।

সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের জেলাল উদ্দিন তালুকদার ৩৯ বছর আগে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। সেই থেকে একই পদে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তিনি।

রাজশাহী জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রাজশাহীর নতুন পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন যোগদানের পর এই সম্মানজনক সংবর্ধনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। চাকরির শেষ দিনে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া পুলিশ সদস্য জেলাল উদ্দিন তালুকদারের হাতে ছুটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর জন্য সরকারি গাড়ি সাজিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়। আজ দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে এই সম্মানজনক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলা পুলিশের কর্মকর্তা ছাড়াও সহকর্মী পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে সাজানো ওই গাড়ির কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ আসনে জেলাল উদ্দিনকে বসানো হয়। এ সময় তিনি কেঁদে ফেলেন। এরপর সহকর্মীরা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে সম্মান ও অভিবাদন জানিয়ে বিদায় দেন তাঁকে। এভাবে সজ্জিত সরকারি গাড়িতে করে তাঁকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বাড়িতে।

চাকরির শেষদিনে সুসজ্জিত গাড়িতে কর্মকর্তাদের আসনে বসিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় রাজশাহীর বাগমারা থানার কনস্টেবল জেলাল উদ্দিনকে। আজ শুক্রবার দুপুর রাজশাহী পুলিশ লাইনসে
প্রথম আলো

জেলাল উদ্দিন তালুকদার রাজশাহী নগরের কেশবপুর এলাকায় বাসাভাড়া করে থাকেন। তাঁকে পুলিশের বিশেষ গাড়িতে করে সেখানেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁকে বাড়িতে এভাবে পৌঁছে দেওয়াতে পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা অবাক হয়েছেন। সহকর্মী পুলিশ সদস্যরা ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা এই ধরনের সম্মানজনক বিদায় সংবর্ধনায় খুশি।

জেলাল উদ্দিন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগণ্য পুলিশ সদস্য হয়ে বিদায়বেলায় পুলিশ সুপারের এ ধরনের সম্মানজনক সংবর্ধনা পেয়ে গর্বিত। পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীদের কাছে নিজেকে একজন সফল পুলিশ সদস্য হিসেবে প্রমাণ করতে পেরে পুলিশ সুপারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

নগণ্য পুলিশ সদস্য হয়ে বিদায়বেলায় পুলিশ সুপারের এ ধরনের সম্মানজনক সংবর্ধনা পেয়ে গর্বিত। পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীদের কাছে নিজেকে একজন সফল পুলিশ সদস্য হিসেবে প্রমাণ করতে পেরে পুলিশ সুপারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জেলাল উদ্দিন তালুকদার

বাগমারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সহকর্মী হিসেবে জেলাল উদ্দিন তালুকদারকে এক বছরের বেশি সময় পেয়েছি। তাঁকে বিদায়বেলায় যে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, তা প্রশংসনীয়।’

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহীর নতুন পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন যোগদানের পর এই অনন্য সম্মানজনক সংবর্ধনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এটি তাঁর মহানুভবতা। বাগমারা থানার কনস্টেবল জেলাল উদ্দিন তালুকদারকে এই সংবর্ধনা দেওয়ায় অন্য পুলিশ সদস্যরা সম্মানিত বোধ করেছেন।