অবসরের ৪০ বছর পর বিদায়ী সংবর্ধনা পেলেন তিনি

অবসরের ৪০ বছর পরে শিক্ষক সাইদুর রহমানকে ক্রেস্ট দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাঁর প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী। ইন্দুরকানি, পিরোজপুর, ২ মে ২০১৯। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
অবসরের ৪০ বছর পরে শিক্ষক সাইদুর রহমানকে ক্রেস্ট দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাঁর প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী। ইন্দুরকানি, পিরোজপুর, ২ মে ২০১৯। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

সাইদুর রহমানের বর্তমান বয়স ১০০ বছর। তিনি মেহেউদ্দিন মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যান ১৯৭৯ সালে। কিন্তু সে সময় কোনো বিদায়ী সংবর্ধনা পাননি। এরপর পেরিয়ে গেছে ৪০ বছর। এই সময়ের মধ্যে সাইদুরের অনেক শিক্ষার্থীও অবসর নিয়েছেন। কিন্তু সাইদুরের আর পাওয়া হয়নি বিদয় সংবর্ধনা। বিদ্যালয় থেকে কখনো নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। তবে সাইদুরের প্রতি ভালোবাসা থেকে ৪০ বছর পর সে উদ্যোগ নিলেন তাঁর কিছু শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে।

সাইদুরের বিদায়ী সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তাঁর ছাত্র অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান। এ ছাড়া তাঁর আরও কয়েকজন ছাত্রের মধ্যে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এম এ মান্নান হাওলাদার, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ সিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল কুদ্দুস, আইনজীবী ওসমান গণি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল লতিফ হাওলাদার, প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

সাইদুর রহমানের ওই সব প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সূত্রে জানা যায়, তাঁদের উপজেলাটি মাত্র কয়েক বছর হলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে এটা ছিল একটা পিছিয়ে পড়া জনপদ। এখানে তেমন কোনো নাগরিক সুবিধা পাওয়া যেত না। তবু শুধু সাইদুর রহমানের কঠোর প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় এমন জায়গা থেকে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আলোকিত মানুষ বের হয়েছেন। তাঁরা আরও জানান, বেশ আগে থেকে চেষ্টা করছেন তাঁদের প্রিয় শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা দেওয়ার, কিন্তু একেকজন একেকজন জায়গায় চাকরি করার কারণে সময় করে উঠতে পারেননি। তবে এখন অনেক শিক্ষার্থী অবসরে গিয়েছেন। তাই সবাই এক হয়ে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার সুযোগ পেলেন।

সাইদুরের শিক্ষার্থী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল কুদ্দুস শিক্ষকের ব্যাপারে স্মৃতিচারণা করে বলেন, শিক্ষক হিসেবে সাইদুর রহমান কড়া প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি নবম শ্রেণির ইংরেজি বিষয় পড়াতেন। নিজের বিষয়ে খুব দক্ষ শিক্ষক ছিলেন তিনি। এ ছাড়া প্রশাসনিকভাবেও কড়া ছিলেন তিনি। তাঁর সময়ে বিদ্যালয়ে নিয়ম–শৃঙ্খলা অটুট ছিল। তাঁর দক্ষতা ও সুন্দর পাঠদানের জন্য ওই সময়ের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। সাইদুর রহমান প্রায় প্রতিদিন রাতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাঁদের পড়ালেখার খোঁজখবর নিতেন। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় সমাজের উন্নয়নে নানা কাজে জড়িত ছিলেন।

বৃহস্পতিবারের ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন সাইদুর রহমানকে। এ ছাড়া, তাঁকে বিভিন্ন উপহার ও ক্রেস্ট দেন তাঁরা। অবসরের ৪০ বছর পর ছাত্রদের এমন উদ্যোগে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন সাইদুর রহমান। তবে বয়স বেশি হওয়ার কারণে কথা অস্পষ্ট হয়ে গেছে তাঁর। তারপরও সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।