অবেদনবিদ ছুটিতে, পাঁচ দিন ধরে অস্ত্রোপচার বন্ধ

সাত দিন আগে হার্নিয়া অপারেশনের (অস্ত্রোপচার) জন্য পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আনারুল হক (৬৫)। কিন্তু অবেদনবিদ না থাকায় হাসপাতলেই শুয়ে আছেন তিনি। ২৪ মার্চ দুপুরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ছোট ছোট দুই সন্তানকে বাড়িতে রেখে পাইলসের যন্ত্রণা নিয়ে গত শুক্রবার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জেসমিন আক্তার (৩০)। পরদিন শনিবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল তাঁর। ভর্তির পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অস্ত্রোপচারের খবর নেই তাঁর। তাঁর কারণ হিসেবে হাসপাতালে অবেদনবিদ নেই বলে জেনেছেন তিনি।

শুধু জেসমিনই নন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের একমাত্র জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অবেদনবিদ) মনসুর আলম ছুটিতে থাকায় গত পাঁচ দিন ধরে দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালে অস্ত্রোপচার সেবা নিতে আসা রোগীরা।

উপায় না থাকায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কেউ কেউ এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে পড়ে থাকলেও অনেকেই আশা ছেড়ে দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলেও গেছেন। জেলা সদরের ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে মাত্র একজন অবেদনবিদ থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের একমাত্র অবেদনবিদ মনসুর আলম তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ জন্য তিনি ২০ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ছুটির আবেদনও জমা দিয়েছেন। এতে ২০ মার্চ থেকেই বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম। এতে বিপাকে পড়া রোগীদের অনেকেরই সামর্থ না থাকায় অন্য কোথাও গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালের ৩৬ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও জুনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যানেস্থেসিয়া (অবেদনবিদ) পদ রয়েছে মাত্র একটি। হাসপাতালে বর্তমানে পদায়ন রয়েছে ১০ জন চিকিৎসক। এ ছাড়া অন্য উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রেষণে কর্মরত আছেন ৯ জন এবং করোনা ডেডিকেটেট চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন ৯ জন। এর আগে নিয়মিতভাবেই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬টি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের রজলীখালপাড়ার জরিনা বেগম (৫৫) বলেন, ‘১৬ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বুকের মধ্যে ঘা হয়েছে। সেই ঘা অস্ত্রোপচার করার জন্য এসেছি। কিন্তু অবেদনবিদের চিকিৎসক না থাকায় এখনেই পড়ে আছি। চিকিৎসক নাকি ছুটিতে আছেন। আমরা গরিব মানুষ, টাকাপয়সাও নেই যে অন্য কোথাও গিয়ে অস্ত্রোপচার করব।’

সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের রতনীবাড়ি এলাকার আনারুল হক বলেন, ‘সাত দিন আগে হার্নিয়া অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কয়েক দিন থেকে শুনছি অবেদনবিদের চিকিৎসক নেই। আজকে (বুধবার) নিজেই অবেদনবিদের চিকিৎসকের ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করেছি। তিনি কী যেন ঝামেলায় ঢাকায় আছেন। আজ রাতেই আসার কথা বলেছেন।’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) আমির হোসেন বলেন, ‘অস্ত্রোপচার করার জন্য আমিসহ গাইনি কনসালট্যান্টও রয়েছেন। তবে অবেদনবিদ ছুটিতে থাকায় সাময়িকভাবে অস্ত্রোপচার বন্ধ আছে। এতে রোগীরা কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছেন।’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. সিরাজউদ্দৌলা পলিন বলেন, ‘১০০ শয্যার হাসপাতালে মাত্র একটি অবেদনবিদ পদ রয়েছে। একজন অবেদনবিদ দিয়ে চলে অস্ত্রোপচারের কাজ। তিনিও তো মানুষ। যেকোনো সময় বিপদ–আপদ হতেই পারে। অবেদনবিদ ছুটিতে থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অবেদনবিদের পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। সেখানে কাউকে পদায়ন করা হলেও এ ধরনের মুহূর্তগুলোতে আমরা এই শূন্যতা পূরণ করতে পারতাম।’

অবেদনবিদ ছুটি থেকে ফিরলে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে তিনি জানান।