অভাবের কারণে দত্তক দেওয়া শিশুটি মায়ের কোলে ফিরেছে

মায়ের কোলে ফিরল নবজাতক। গতকাল শুক্রবার রাতে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নয়াবাড়ি গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নয়াবাড়ি গ্রামে অভাবের কারণে দত্তক দেওয়া নবজাতক অবশেষে মায়ের কোলে ফিরেছে। প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনা হয়। এই নবজাতকের পরিবারকে বাড়ি নির্মাণসহ নানাভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

ওই নবজাতক তালুক হরিদাস গ্রামের জোকতার আলী ও হাসিনা বেগমের ছেলে। জোকতার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন। হাসিনা আরও তিন সন্তান নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে নয়াবাড়ি গ্রামে থাকেন। হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও জোকতার খরচ দেন না। এমন অবস্থায় গত মঙ্গলবার সকালে ছেলের জন্ম দেন হাসিনা। অভাবের সংসারে শিশুটির ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। এ অবস্থায় নয়াবাড়ি গ্রামের অধীর চন্দ্র রায়ের মাধ্যমে তাঁর শ্বশুরবাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পুনকর গ্রামের একটি পরিবারে শিশুটিকে দিয়ে দেন হাসিনা ও জোকতার। বিকেলেই শিশুটিকে নিয়ে যায় ওই পরিবার।

ওই ঘটনা গতকাল রোকশানারা মুক্তা নামের একজন ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এরপর প্রথম আলোর অনলাইন, ছাপা সংস্করণসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর নবজাতকের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করে প্রশাসন।

আরও পড়ুন
অভাবের সংসারে ছেলেটা জন্ম নিল। নিজের খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই স্বামীর কথায় ওমাক পোষানি (দত্তক) দিছিলাম। এখন তোমরা ছাওয়াটাক আনি দিলেন, ব্যবস্থা করার কথা কইছেন, আর সমস্যা নাই। তোমরা খোঁজখবর রাখবেন।’
হাসিনা বেগম, নবজাতকের মা

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনসুর উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম আলো অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফরসহ অন্যদের নজরে আসে। শিশুটিকে ফিরিয়ে আনতে আমরা তৎপরতা শুরু করি। গতকাল রাতে নয়াবাড়ি গ্রামের অধীর চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ও পুনকর গ্রামের মেয়ে কণিকা রানি এবং সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম আজাদের মাধ্যমে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনা হয়। রাতেই শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’ এ সময় তিনি ও আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও আরও বলেন, লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সাংসদ ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে হাসিনা বেগমকে আর্থিক সহায়তা হিসেবে নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। হাসিনার ভাই কেরামত আলীকে ২ শতাংশ জমি তাঁর (হাসিনা) নামে কবলা করে দিতে বলা হয়েছে। কেরামত এতে রাজি হয়েছেন। ৩ মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ‘জমি আছে বাড়ি নেই’ অগ্রাধিকার প্রকল্প থেকে হাসিনাকে বাড়ি করে দেওয়া হবে। আগামীকাল রোববার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে হাসিনাকে আরও কিছু সহায়তা করা হবে।

সন্তানকে ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন হাসিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসারে ছেলেটা জন্ম নিল। নিজের খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই স্বামীর কথায় ওমাক পোষানি (দত্তক) দিছিলাম। এখন তোমরা ছাওয়াটাক আনি দিলেন, ব্যবস্থা করার কথা কইছেন, আর সমস্যা নাই। তোমরা খোঁজখবর রাখবেন।’