অভাবের তাড়নায় ১৪ বছর বয়সেই চালাত রিকশা, লাশ পড়ে রইল ধানখেতে

লাশ
প্রতীকী ছবি

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা থেকে এক কিশোর রিকশাচালকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের একটি ধানখেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত কিশোরের নাম মিলন মিয়া (১৪)।
মিলন মিয়া নীলফামারির ডিমলা উপজেলার নাওতারা এলাকার মোরশিদুল ইসলামের ছেলে ও স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নীলফামারী এলাকার আরও কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে নরসিংদী শহরের শাপলা চত্বর এলাকার একটি মেসে ভাড়া থেকে রিকশা চালাত সে।

মিলন মিয়ার সঙ্গে একই মেসে থাকা রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর ধরে নরসিংদী শহরে রিকশা চালাত মিলন। অভাবে থাকলে কিছুদিন নরসিংদীতে এসে রিকশা চালাত আবার কিছু টাকা জমা হলে বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনা করত। গতকাল রাত আটটার দিকে মেসে তাঁরা একসঙ্গে রাতের খাবার খান। এরপর মোটরচালিত রিকশা নিয়ে উপার্জনের উদ্দেশ্যে বের হয় মিলন। রাতে সে আর বাসায় ফেরেনি। আজ সকালে তার ডান হাতের রগকাটা অবস্থায় লাশ উদ্ধারের খবর পান তাঁরা।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, আজ সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ওই পথ ধরে যাওয়ার সময় ধানখেতে অজ্ঞাত কিশোরের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে সাড়ে ১০টার দিকে শিবপুর থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। পরে নিহত কিশোরের পরনের টি–শার্টে ছাপা নীলফামারীর একটি ক্লাবের নম্বরে কল দেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে ঘটনা জানতে পেরে কিশোরের পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করলে তার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে তার সহকর্মী রিকশাচালকেরা নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে এসে নিহত কিশোরের লাশ শনাক্ত করেন।

যে গ্যারেজে মিলন তার রিকশা রাখত, সেটির মালিক আবু জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রিকশাটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের ধারণা, মোটরচালিত রিকশাটি ছিনতাইয়ের জন্যই তার ডান হাতের রগ কেটে হত্যার পর লাশ ধানখেতে ফেলে রাখা হয়েছে। এবার সে নরসিংদী এসেছিল একটি অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন কেনার আশায়। আয় থেকে জমানো আট হাজার টাকা দিয়ে গতকালই একটি মুঠোফোন কিনেছিল সে। তবে সেটি ব্যবহার করে যেতে পারল না সে।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন মিয়া জানান, ধানখেত থেকে ওই কিশোর রিকশাচালকের ডান হাতের রগকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এলে পরবর্তী আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, তার রিকশাটি ছিনিয়ে নিতেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে তা নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে।