জগন্নাথপুর পৌরসভায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আ.লীগের পরাজয়

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে উপনির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে এভাবে হারতে হবে তা ভাবতে পারেননি দলীয় প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক নেতা রয়েছেন, যাঁরা বুকে নৌকা প্রতীক লাগিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আক্তার হোসেনকে ভোট দিয়েছেন। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। আমার পরাজয় বড় কিছু নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে নৌকার বিপর্যয় বিষয়টি ভাবতে হবে। আর ইভিএম জটিলতায় অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি।’

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৬ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক পৌর মেয়র এবং সদ্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আক্তার হোসেন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তিনি চামচ প্রতীকে ৮ হাজার ৩৭৮ ভোট পান। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া ৮ হাজার ১৮ ভোট পান।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের নির্বাচনী এলাকা জগন্নাথপুর পৌরসভা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর সদর ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। ২০০০ সালে প্রথম পৌর নির্বাচনে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হারুনুর রশীদ হিরন মিয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আবদুল মনাফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে আবার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মনাফ মেয়র নির্বাচিত হন। গত বছরের ১১ জানুয়ারি তিনি মারা গেলে ১০ অক্টোবর উপনির্বাচনে মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ১৬ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে মিজানুর রশীদ ভূঁইয়াকে ৩৬০ ভোটে পরাজিত করে আক্তার হোসেন মেয়র নির্বাচিত হন।

জগন্নাথপুর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে পৌর নির্বাচনে নৌকা পরাজিত হয়েছে। যাঁরা গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেননি, তাঁরাই পৌর নির্বাচনে নৌকাকে ডুবিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক মাসুম আহমদ বলেন, পৌর নির্বাচনে একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে অতিথি করে না আনায় তাঁর অনুসারীরা বুকে নৌকা প্রতীকের লোগো লাগিয়ে চামচ প্রতীকে ভোট দিয়ে দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক মিন্টু রঞ্জন ধর বলেন, জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারণার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুস সামাদ আসতে চেয়েছিলেন ৬ জানুয়ারি। এরপর তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে তাঁরা কর্মসূচি দেননি। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর আসতেও পারেননি।

তবে সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। কাউকে বাধা দেননি।

এ বিষয়ে আজিজুস সামাদ বলেন, জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আমজদ আলীর কারণে। তিনি ৮০০ ভোট পাওয়ায় নৌকা ৩৬০ ভোটে পরাজিত হয়েছে।

পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আহাদ বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নৌকা পরাজিত হয়েছে। দলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল না।