অযত্নে পড়ে আছে গণকবরটি

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থালবন্দরের শূন্যরেখায় (জিরো পয়েন্ট) অবস্থিত গণকবরটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। কাঁটাতারের পাশে ভারতীয় সীমানা। সোমবার দুপুরে
প্রথম আলো

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তখুঁটি। কয়েক গজ দক্ষিণে ভোগাই নদ। এর তীর ঘেঁষে শুকানো হচ্ছে খড়। মাচা বেঁধে লাগানো হয়েছে সবজির চারা। পড়ে আছে শুকনা গোবরও। কেউ বলবে না তীরঘেঁষা এই ২০ শতাংশ জায়গাজুড়ে রয়েছে একটি গণকবর।

সংরক্ষণের অভাবে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা গণকবরটি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও এলাকায় অবস্থিত। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা গণকবরটি দ্রুত সংরক্ষণের দাবি জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালে নাকুগাঁও স্থলবন্দর হয়ে এ দেশের কয়েক শ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় যায়। ২৫ মে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি বড় দল ভোগাই নদ পার হয়ে ভারতের ডালু বিএসএফ ক্যাম্পসহ প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘিরে ফেলে। বিএসএফ এ সময় প্রতিরোধ করে। এক ঘণ্টার যুদ্ধে ৯ বিএসএফ সদস্যসহ শতাধিক বাংলাদেশি নিহত হন।

সেদিন অনেক শহীদের লাশ ভোগাই নদের পানির স্রোতে ভেসে যায়। তাঁদের মধ্যে যে ৫০-৬০ জনের লাশ পাওয়া যায়, সেগুলো নাকুগাঁও শূন্যরেখার কাছে গণকবর দেওয়া হয়। আর বিএসএফ সদস্যদের ভারতের মাটিতে সৎকার করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেই দিনের যুদ্ধে শহীদ ভারতের ৯ বিএসএফের স্মরণে সীমানার কাঁটাতার ঘেঁষে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর গণকবরটি আজও সংরক্ষণ করা হয়নি।

বিজিবির মাধ্যমে গণকবরটির জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি পরিমাপ করে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মাহফুজুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নালিতাবাড়ী

পৌর শহরের বাসিন্দা বিভারানী দে বলেন, ওই দিনের গণহত্যায় তাঁর স্বামীসহ নির্বিচারে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। গণকবরটি সংরক্ষণ করা হলে এ বিষয়ে আরও মানুষ জানতে পারত।

নাকুগাঁও গ্রামের সুকুমার সাহা বলেন, ভারত ৯ বিএসএফের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছে। কিন্তু এখানে তাঁদের শতাধিক মানুষ শহীদ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেই দিনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের অনেক সদস্য এখানে গণকবরটি দেখতে আসেন। কিন্তু গণকবরটি সংরক্ষণ না করায় তাঁরা হতাশা ব্যক্ত করেন গ্রামবাসীর কাছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুল রহমান বলেন, তাঁরা চান গণকবরটি সংরক্ষণ করে সেখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হোক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম বলেন, বিজিবির মাধ্যমে গণকবরটির জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি পরিমাপ করে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিজিবির মাধ্যমে গণকবরটি সংরক্ষণ করে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।