অসহায় মানুষের পাশে চিকিৎসক নূরুল হুদা

চিকিৎসা দিচ্ছেন নুরুল হুদা
ছবি : সংগৃহীত

গরিব মানুষদের শীতবস্ত্র ও ঈদসামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে নাক, কান ও গলার অস্ত্রোপচার। আলোকিত মা-বাবাকে সম্মাননা। গরিব রোগীদের কানের পর্দা জোড়া লাগিয়ে দেওয়া। ঘর নির্মাণে টিন প্রদান। গভীর নলকূপ স্থাপন। এসব করছেন নূরুল হুদা ওরফে নাঈম নামের এক চিকিৎসক। অসহায় ও বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় তিনি এসব করে দিচ্ছেন।

নূরুল হুদা সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর খমিয়া পাতন গ্রামে। বাবা আবদুল লতিফ ও মা বেগম নূর জাহান উভয়েই ছিলেন শিক্ষক। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। সিলেট নগরের কাজলশাহ এলাকায় আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এনজেএল ইএনটি সেন্টার। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানও। এ ছাড়া চালাচ্ছেন এনজেএল ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মূলত সমাজসেবামূলক কাজ করছেন নূরুল হুদা। চিকিৎসাসেবায় অবদানের জন্য ২০১৮ সালে নূরুল হুদা সোহাগ সাহিত্য গোষ্ঠী পুরস্কার লাভ করেন।

এনজেএল ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে নূরুল হুদা ৩০ ডিসেম্বর ‘আসুন জন্মদিনে একটি ভালো কাজ করি’ স্লোগানে অন্তত ১০ জন গরিব ও দুস্থ রোগীর বিনা মূল্যে কানের পর্দা জোড়া লাগিয়ে আসছেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর ৫ জনকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২০১১ সাল থেকে সিলেটের আলোকিত ১০ জন মা-বাবাকে সম্মাননা প্রদানের পাশাপাশি বিশ্ব মা ও বাবা দিবসে আলোচনা ও শোভাযাত্রা করে আসছে তাঁর ফাউন্ডেশন। প্রতি স্বাধীনতা দিবসে ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে ১০ জন রোগীর বিভিন্ন ধরনের নাক, কান ও গলার রোগের অস্ত্রোপচার করে দেওয়া হয়।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে ‘ফ্রি ফ্রাইডে’ ক্লিনিক পরিচালনা করছে এনজেএল ফাউন্ডেশন। মাসে দুই দিন এই কার্যক্রম চলে। দরিদ্র মানুষ এলাকার মসজিদের ইমাম কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে বিনা পয়সায় নাক, কান ও গলার চিকিৎসা নেওয়া যায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২০০ জন রোগী বিনা মূল্যে এই চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে অন্তত ৫০ দরিদ্র ব্যক্তিকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৭ থেকে ৮ ধরনের ইএনটি অস্ত্রোপচার বিনা মূল্যে করে দেওয়া হয়েছে। প্রায়ই ফাউন্ডেশন সপ্তাহব্যাপী ফ্রি হিয়ারিং স্ক্রিনিং টেস্টের আয়োজন করে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন এ সেবা নিয়েছেন। এনজেএল স্কুল হেলথ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সিলেটের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় সচেতনতামূলক সেমিনার ও ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা।

এনজেএল ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হেড-নেক ক্যানসার দিবসে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকে এনজেএল। গরিব-অসহায় মানুষদের প্রতি ঈদে খাদ্যসামগ্রী এবং শীতে পোশাক বিতরণ করা হয়। গরিব রোগীদের কাছ থেকে নূরুল হুদা কখনোই কোনো ফি নেন না। তাঁর এনজেএল ইএনটি সেন্টারে প্রায় প্রতিদিনই এ রকম বেশ কিছু রোগীর চিকিৎসা তিনি করে থাকেন। বিনা মূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি দরিদ্র পাঁচটি পরিবারকে নলকূপ এবং আরও সাতটি পরিবারকে ঘর নির্মাণের জন্য টিন উপহার দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এনজেএল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি চ্যারিটেবল ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নূরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল মানুষের জন্য ভালো কিছু কাজ করার। এ তাড়না থেকেই নিজের অবস্থান থেকে কিছু করার চেষ্টা করছি। সাধারণত আমাদের সমাজে একজন চিকিৎসক ব্যস্ত মানুষ হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু আমি এই গতানুগতিক নিয়ম ভাঙতে চেয়েছি। ব্যস্ততার ফাঁকেও যে চাইলে মানুষের জন্য কিছু করা যায়, সেটাই দেখাতে চেয়েছি।’

চিকিৎসক নূরুল হুদা বলেন, কোনো অসহায় ও দরিদ্র রোগী টাকার অভাবে নাক, কান ও গলাসংক্রান্ত রোগে ভুগছেন, এমন ঘটনা জানলে আমি তাৎক্ষণিক তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছি। চিকিৎসাসহায়তার পাশাপাশি এনজেএল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অসহায় ও বিপাকে পড়া মানুষের সহায়তায় সামাজিক নানা কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে।