অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত দক্ষিণ উপকূলের লোকালয়

গতকাল বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বরিশাল নগরে ঢুকে পড়েছে কীর্তনখোলা নদীর জোয়ারের পানি। গতকাল বিকেলে সদর রোডেছবি: প্রথম আলো

সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের নদ-নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর তীরের জনপদ ও চরাঞ্চল দু-তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে বরিশাল নগরের বেশ কিছু এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। একইভাবে পটুয়াখালী শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং বরগুনার আমতলী, তালতলী উপজেলার অন্তত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট অধিক উচ্চতার জোয়ার শুরু হয় গত রোববার। বিশেষ করে নদীতীরের এলাকার বাসিন্দারা রাতে ও দিনে দুবারের জোয়ারে ভাসছে।

গতকাল মঙ্গলবারও বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া সুগন্ধা, সন্ধ্যা, পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর—এসব নদ-নদীতেও তিন দিন ধরে অধিক উচ্চতার জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে।

গত সোমবার বিকেলের দিকে কীর্তনখোলার পানি বরিশাল নগরীতে ঢুকলে নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। নগরীর রসুলপুর, ভাটিখানা, সাগরদী, ধান গবেষণা রোড, জিয়ানগর, ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোড জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। কীর্তনখোলার সঙ্গে যুক্ত ড্রেন দিয়ে এসব এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার বাসিন্দারা।

বরিশাল সদরের দপদপিয়া, চরবাড়িয়া, কালিজিরা, নগরের ধান গবেষণা সড়ক. ব্যাপ্টিস্ট মিশন এলাকা, জিয়া সড়ক, রসুলপুর, পলাশপুর, ভাটিখানা, আমানতগঞ্জ; জেলার মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী, বাবুগঞ্জ উপজেলার অনেক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে।

বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ওডিশা উপকূলের অদূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর–সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গতকাল সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নদ-নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে। ফলে সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর ও নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে।

সোমবার ও গতকাল দুদিন দুই দফা জোয়ারের পানিতে শহরের নিউমার্কেট, পুরান বাজার, নতুন বাজার, এসডিও রোড, মহিলা কলেজ রোড, কাঠপট্টি এলাকায় পানি প্রবেশ করে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মোশারেফ হোসেন বলেন, তাঁর দোকানের সামনের রাস্তায় প্রায় দুই ফুট পানি জমেছে।

গতকাল দুপুরে জোয়ারের সময় পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জোয়ারের পানির প্রবল চাপে সদর উপজেলার ইটবাড়ীয়া ইউনিয়নের চান্দখালী গ্রামে পায়রা নদীর পাড়ের ৬০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।

জেলার রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে বাঁধের বাইরে তিন-চার ফুট পানিতে প্লাবিত হওয়ায় স্থানীয় লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলা বরইতলা, ডালভাঙ্গা, পশ্চিম গোলবুনিয়া, বাওয়ালকার এলাকার বাঁধের বাইরে ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বরইতলা ফেরিঘাটের সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পারাপারে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল এবং প্রতিনিধি, পটুয়াখালী ও বরগুনা]