আইপিএল নিয়ে ঋণ করে বাজি, নিঃস্ব হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা

খুলনার পাইকগাছায় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নিয়ে বাজি ধরার বিষয়টি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাজিতে হেরে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। অনেক সংসারে অশান্তি তৈরি হচ্ছে। বাজিতে বড় অঙ্কের টাকা খুইয়ে এক ব্যক্তি আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো ওই ব্যক্তির নাম শেখ আহাদ (২২)। তিনি উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের চক কাওয়ালী গ্রামের বাসিন্দা। আত্মহত্যার চেষ্টার সময় পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পাইকগাছা থানা–পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, আইপিএলে জুয়া ধরার কারণে ওই ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার ২৫-৩০ জনকে আসামি করে মামলাও করা হয়।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদখালী বাজারের একটি চায়ের দোকানের আড্ডায় আইপিএলের জুয়া খেলা চলত। ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল প্রতিদিন অনেকেই আইপিএলকে কেন্দ্র করে জুয়ায় অংশ নেন। জুয়ায় অংশগ্রহণকারী শেখ আহাদের কাছে অপর জুয়াড়ি পলাশ সরদার ১ লাখ টাকা ধার চান। আহাদ স্থানীয় বাজারের আশা ও উন্নয়ন প্রচেষ্টা এনজিও থেকে ৯০ হাজার টাকা তুলে পলাশকে ধার দেন। পরে পলাশ আরও টাকা চাইলে আহাদ নিজের মোটরসাইকেল বন্ধক রেখে তাঁকে আরও ৫০ হাজার টাকা দেন। সব টাকাই দেওয়া হয় জুয়া খেলার জন্য। পরে পলাশের কাছে আহাদ ধার দেওয়া মোট ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ফেরত চাইলে পলাশ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পলাশ তাঁকে বলেন, তিনি তো তাঁদের সঙ্গেই খেলে সব টাকা হেরেছেন; তাই টাকা দিতে পারবেন না। এদিকে আহাদ আবারও জুয়ায় হারতে থাকেন। পাশাপাশি অন্যদের কাছ থেকে ধার নিয়েও হেরে যান। অন্যরা টাকার জন্য চাপ দেওয়ায় ও নিজের পাওনা না পাওয়ায় শেখ আহাদ বসতঘরের আড়ার সঙ্গে শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।

ওই ঘটনায় পাইকগাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজিত ঘোষ বাদী হয়ে ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় গতকাল শনিবার আহাদ ও পলাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই দিনই তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও যুবকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকগাছা থানার অনেক এলাকায় আইপিএল নিয়ে চলছে জুয়ার রমরমা কারবার। সাধারণত যুবকেরাই এতে অংশ নিচ্ছেন। মূলত বিভিন্ন মোড়ের দোকানগুলোতে আইপিএল নিয়ে বাজি ধরা হয়। মোবাইল ফোনে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জুয়া পরিচালনা করা হয়। যাঁরা পরিচিত বাজিগর, তাঁরা মুঠোফোনের মাধ্যমে বাজি ধরেন। আর যাঁরা নতুন তাঁরা নগদ টাকা জমা দিয়ে বাজি ধরেন। খেলা নিয়ে অনেক রকম জুয়া হয়। ওই এলাকায় ম্যাচের ফলাফল নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জুয়া খেলা হয়। এ ছাড়া কোন ওভারে কত রান হবে? কোন বোলার কত উইকেট পাবে? কোন ব্যাটসম্যান কত রান করবে? শেষ ওভারে কত রান হবে? এমনকি কোন বলে কত রান হবে—এসব নিয়ে বাজি ধরা হয়। ২০০-৫০০ থেকে শুরু করে হাজার হাজার টাকার জুয়া ধরা হয়। বিশেষ করে যদি অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোনো দলের সঙ্গে শক্তিশালী কোনো দলের খেলা থাকে তাহলে দুর্বল দলের জন্য তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত টাকার লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়।

চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান আক্কাছ আলী ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় ক্রিকেট নিয়ে জুয়া বেড়েছে। করোনার সময় বেকার যুবক আর মূলত ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলচালকেরা এতে জড়িয়ে পড়ছেন। বাজিতে হেরে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। পরিবার ও সমাজকে আরও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেরা কোথায় যায়, কী করে তার খোঁজ মূলত পরিবারকে রাখতে হবে।

পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত করমকর্তা (ওসি) মো. এজাজ শফী প্রথম আলোকে বলেন, অপরাধটির ধরন কিছুটা নতুন। পাইকগাছায় এর কয়েকটা সিন্ডিকেট আছে। যাঁরা ধারদেনা করে, সম্পদ বন্ধক রেখে আইপিএলে জুয়া খেলছেন। পুলিশ ইউনিয়নভিত্তিক এই ধরনের জুয়াড়িদের একটি তালিকা তৈরি করছে। পাইকগাছায় যাঁরা এটা করছেন, তাঁদের সবাইকে ধরা হবে।