আইসিইউ ওয়ার্ডে আগুন: বাইরে নেওয়া রোগীর মৃত্যু

ফরিদপুরে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছেসংগৃহীত

ফরিদপুরে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ওয়ার্ড থেকে বাইরে আনার পর একজন রোগীকে অক্সিজেন দিতে গিয়ে দেখা যায় তিনি মারা গেছেন। অগ্নিকাণ্ডের কারণে ওই রোগীকে বারান্দায় আনার ১০ মিনিটের মধ্যেই তিনি মারা যান।

আজ শনিবার বেলা সোয়া একটার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে গেছে ওয়ার্ডের একটি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ শয্যা নিয়ে একটি ভবনকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হয়।

আইসিইউ ওয়ার্ডে কর্মরত সেবিকা ও ওয়ার্ড বয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ডে ওই সময় মোট নয়জন রোগী ছিলেন। বেলা সোয়া একটার দিকে চিকিৎসাধীন ইউসুফ আলীর শয্যার পাশের হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলাতে আগুন ধরে যায়। ওই সময় কর্মরত সেবিকা যূথী রায় দ্রুত বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বন্ধ করে দেন। কর্মরত ওয়ার্ড বয় মোহসীন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

আইসিইউ ওয়ার্ডের ইনচার্জ রাজিয়া সুলতানা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন নয়জন রোগীকে দ্রুত বের করে বারান্দায় নিয়ে আসা হয়। পরে আগুন নিভে গেলেও ওয়ার্ডটি ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে ধোঁয়া বের করেন। তিনি বলেন, আইসিইউ ওয়ার্ডে মোট নয়টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা ছিল। আগুনে একটি পুড়ে গেছে।

আইসিইউ ওয়ার্ডে মোট নয়টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা ছিল। আগুনে একটি পুড়ে গেছে।
সংগৃহীত

একজন রোগীর মারা যাওয়া প্রসঙ্গে রাজিয়া বলেন, আগুন লাগার পর রোগীদের দ্রুত ওয়ার্ডের বাইরে মেঝেতে এনে রাখা হয়। সেখানে বেলা ১টা ২৬ মিনিটের দিকে সাধন চন্দ্র অধিকারী (৬০) নামের রোগী মারা যান। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। তাঁকে অক্সিজেন দিতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি মারা গেছেন। তিনি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির বাসিন্দা ছিলেন। ২৬ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।


সাধন চন্দ্রের বড় ছেলে তারক অধিকারী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, অক্সিজেন দিতে দেরি হওয়ায় তাঁর বাবা মারা গেছেন।

আগুন লাগার সময়কার বর্ণনা দিতে তিনি গিয়ে বলেন, যখন আগুন লাগে, তখন ওয়ার্ডের সব রোগীর স্বজনেরা দ্রুত তাঁদের বের করে আনেন। আইসিইউ ওয়ার্ডটি চারতলায়। অক্সিজেনের সিলিন্ডার থাকে দুইতলায়। তিনি (তারক) সেখান থেকে বাবার জন্য দ্রুত গিয়ে সিলিন্ডার নিয়ে আসেন। কিন্তু সেটি খালি ছিল। এরপর গিয়ে আরেকটি আনেন। বাবার অবস্থা খারাপ, তাই হাসপাতালের লোকজনকে দ্রুত অক্সিজেনের সংযোগ দিতে অনুরোধ জানান। কিন্তু তাঁরা দেরি করে ফেলেন।

রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে কোনো গাফিলতি ছিল কি না, জানতে চাইলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, রোগীদের দ্রুতই শিফট করা হয়েছে। দ্রুতই তাঁদের অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। এরপরও রোগীটি মারা গেছেন। এ ব্যাপারে আর কী বলার আছে।


জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আফজাল হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হলেও তদন্তে দেখা গেছে, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা মেশিন বিস্ফোরণ হয়ে আগুন লাগে।

মারা যাওয়া রোগীর স্বজনদের আনা সময়ক্ষেপণের অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও তিনি জানান। এ ঘটনায় কমিটির তদন্তকাজ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপক কুমার রায় তদারকি করবেন।


আইসিইউ ওয়ার্ডে একজনের মৃত্যু


আগুন লাগার আগে দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটের দিকে আইসিইউ ওয়ার্ডে শামীমা খাতুন (৪৫) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি মধুখালী পৌরসভার মেছরদিয়া মহল্লার জাকির হোসেনের স্ত্রী। ২৬ আগস্ট তিনি এ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন।