আওয়ামী লীগ নেতার বাধায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ বন্ধ

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র।
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি  ফজলুল হক হায়দারী লোকজন নিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আজ বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ফজলুল হক হায়দারী কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানও। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বুঝতে হবে যা করেছি, নিজের জন্য নয়। জেলা পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে জেলা পরিষদের জমি রক্ষা আমার দায়িত্ব। এখানে জেলা পরিষদের ৩৬৫ শতাংশ জায়গা ছিল। পাঁচ বছর আগে জেলা পরিষদের জায়গার মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে হাসপাতালের জন্য ১৬২ শতাংশ জায়গা দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বাইরে গিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ করছিল। এ কারণে বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক প্রথমে আমাদের জায়গার গাছের ডাল কেটে ফেলে ক্ষতি করেন। পরে হাসপাতালের জায়গা জেলা পরিষদের বলে দাবি করেন। আজ তিনি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজে বাধা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা যে জায়গায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছি, সেই জায়গার কাগজপত্র আমাদের হাতে রয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল আলম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার কারণ জানতে জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর না থাকায় চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোগীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছিল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের একাধিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে ৫৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৫০ টাকা বরাদ্দ দেয়। কার্যাদেশ পায় এমএসএসবি বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০ জুন থেকে কাজ শুরু হয়। কিন্তু সীমানাপ্রাচীরের জায়গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নয়, তা জেলা পরিষদের—এমন দাবি করে পরদিন উপজেলার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির অনুগত ব্যক্তিরা ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতির এমন নির্দেশের পর ঠিকাদারের লোকজন কাজ বন্ধ রাখে। এই অবস্থায়ই তাঁর নির্দেশে ১ জুলাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লাগোয়া ২০ থেকে ২৫টি গাছের ডাল কেটে ফেলা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জায়গার গাছের ডাল কেটে ফেলায় ইউএনওর কাছে প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিযোগ করেন।

এদিকে গাছের ডাল কাটার ঘটনায় ইউএনওর কাছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের পক্ষ থেকে আরও একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। ৬ জুলাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক দেব, আরেক ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) লতিফা হক, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম গিয়াস উদ্দিন ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেশেম মিয়ার যৌথ সইয়ে লিখিত অভিযোগটি করা হয়। অভিযোগে ডাল কাটার সঙ্গে জড়িত তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির ছেলে আদিফুল হকের নাম উল্লেখ থাকলেও তাঁর নাম ছিল না।

গাছের ডাল কাটার অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক বলেন, জায়গা জেলা পরিষদের। জেলা পরিষদ রেজুলেশন করে ডাল কাটার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

তবে গাছের ডাল কাটার ঘটনা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দূরত্ব তৈরি হয়। শুধু তা-ই নয়, উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের কাছে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। ফজলুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশের এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন। বিষয়টি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক মাত্রা পেতে শুরু করলে ফজলুল হক শক্ত অবস্থান নেন। ফলে এই অবস্থায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের বিষয়টি আটকে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানা নির্ধারণে ইউএনওর কাছে আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের একজন সার্ভেয়ার দিয়ে সোমবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেন ইউএনও।

ইউএনও সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আজ সকালে কাজ শুরু করলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক বিষয়টি জানতে পারেন। সকাল নয়টার দিকে তিনি লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এরপর ইউএনওর কাছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, জায়গাটি জেলা পরিষদের। ওই জায়গা মাপতে হলে সব পক্ষকে নিয়ে যেন মাপা হয় এবং সবার উপস্থিতিতে যেন জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।