আকাশে কালো মেঘ, তবু বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্র ফাঁকা

আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি কম। পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার টগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের একটি কক্ষে দুটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় তোলা। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি কম। পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার টগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের একটি কক্ষে দুটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় তোলা। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের রাতের আকাশে জমেছে কালো মেঘ। ঘুটঘুটে অন্ধকার আর গুমোট আবহাওয়া যেন বলে দিচ্ছে ‘সুপার ঘূর্ণিঝড়’ আম্পানের পূর্বাভাস। ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আগেও এমন গুমোট পরিবেশ লক্ষ করা গিয়েছিল।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে মানুষের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু যায়। তবে বিকেলে বৃষ্টি থেমে গেলে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রমুখী আর হয়নি। রাতে বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা।

পিরোজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার সাতটি উপজেলায় ২৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ২৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি ৩২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করে যেতে বলা হয়েছে। বেশ কিছু আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও শিশুখাদ্যের ব্যবস্থা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিসি), স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ১ হাজার ৭৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় জনসাধারণকে সতর্ক করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। টাঙানো হয়েছে বিপৎসংকেতসূচক পতাকা।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলে আঘাত হানতে পারে। নদীতীরের মানুষকে সতর্ক করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য লাল পতাকা নিয়ে বিপৎসংকেত দেখিয়ে ও মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছেন আবদুল লতিফ নামের এক ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কুমিয়ান গ্রামে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
ঘূর্ণিঝড় আম্পান উপকূলে আঘাত হানতে পারে। নদীতীরের মানুষকে সতর্ক করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য লাল পতাকা নিয়ে বিপৎসংকেত দেখিয়ে ও মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছেন আবদুল লতিফ নামের এক ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কুমিয়ান গ্রামে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

আজ রাত সাড়ে আটটায় পিরোজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ শংকরপাশা হক প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ভবনটি ফাঁকা। কেউ আশ্রয় নিতে আসেনি। এরপর ইন্দুরকানি উপজেলার ১১ নম্বর টগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় জনসাধারণকে সতর্ক করতে মাইকিং করছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুর শহরের সিও অফিস মোড়ে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় জনসাধারণকে সতর্ক করতে মাইকিং করছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুর শহরের সিও অফিস মোড়ে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

পিরোজপুর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক নাসিফ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আম্পান আগামীকাল (বুধবার) বিকেলে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। তাই আজ রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে খুব কম মানুষ গিয়েছেন। তবে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার, পানি, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগে আগে খেতের পাকা ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। আজ মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার গোবর্ধন গ্রামে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগে আগে খেতের পাকা ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। আজ মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার গোবর্ধন গ্রামে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

মঠবাড়িয়া উপজেলার সবুজনগর গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘সাধারণত ঝড়-বৃষ্টি-বাতাস শুরু হলে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়। সন্ধ্যার পরে বৃষ্টি না থাকায় এবং আগামীকাল আম্পান আঘাত হানার খবরে আমাদের গ্রামের কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।’

নদীর তীরে এভাবে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে উপকূলের মানুষ। আম্পানের ক্ষয়ক্ষতির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এসব পরিবার। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার বলেশ্বর নদ–তীরবর্তী চারাখালী গ্রামে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
নদীর তীরে এভাবে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে উপকূলের মানুষ। আম্পানের ক্ষয়ক্ষতির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এসব পরিবার। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার বলেশ্বর নদ–তীরবর্তী চারাখালী গ্রামে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোজাহারুল হক বলেন, জেলার ৫৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি কম। তবে আবহাওয়া বৈরী হলে কাল মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে।