আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচন: ‘ভোট না দিয়েই ফিরে গেছি’

আখাউড়া পৌরসভার দেবগ্রাম শাহ সুলতান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট কারচুরির অভিযোগ এনে রোববার বেলা দুইটার দিকে মিছিল করে বিক্ষুব্ধ লোকজন
প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার দেবগ্রাম পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র। সকাল সাড়ে ১০টা। ভোটারদের দীর্ঘ সারি। ছয়টি বুথের সব কটিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্টরা নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করলেন কয়েকজন ভোটার। এ সময় ছবি তুলতে সাংবাদিকদের বাধা দেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কামাল আহাম্মদ খান।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে কোহিনুর আলম নামের এক ভোটার বলেন, ‘কেন্দ্রে গিয়ে দেখি, আমার ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমার আঙুল আছে। আমার ভোট আমি দিব। আমি কেন ভোট দিতে পারব না?’

এই কেন্দ্রের আরেক ভোটার মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর তাঁরা (নৌকার এজেন্ট) বলছে, আমাদের এই প্রতীকে আপনার ভোটটা দিতে হবে। পরে ভোট না দিয়েই ফিরে গেছি।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কামাল আহাম্মদ খান বলেন, ‘কোনো বুথেই ওপেন ভোট দেওয়া হচ্ছে না। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ চলছে।’

এর আগে সকাল সাড়ে নয়টায় বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হক ভূঁইয়ার (নারকেলগাছ) মেয়ে শাফিনাজ আক্তার বলেন, নৌকার এজেন্টরা ভোটারদের সঙ্গে গোপন কক্ষে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে তাঁরা কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলছেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার খড়মপুর শাহ পীর কল্লা শহীদ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৯ নম্বর বুথে দেখা গেছে, মেয়র পদের ইভিএম যন্ত্র গোপন কক্ষের বাইরে রেখে ভোট নেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয় জেনে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নাইম চৌধুরী তড়িঘড়ি করে ইভিএম যন্ত্রটি গোপন কক্ষে নিয়ে যান। নাইম চৌধুরী বলেন, মাঝেমধ্যে এমন হয়েছে। এ সময় তিনি সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে নিয়ম মেনে কাজ করতে বলেন।

ওই কেন্দ্রে কথা হয় জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছে, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর কিছু হয়নি। আর ওপেন ভোটের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। আর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হচ্ছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) গোপন কক্ষের বাইরে রেখেই প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়েসহ আরও কয়েকটি কেন্দ্রে এ রকম করা হচ্ছে।

গোপন কক্ষের বাইরে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভোটার। রোববার দুপুর সাড়ে বারোটায় বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে
প্রথম আলো

কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন
আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে দেবগ্রাম পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল ইসলাম খান। এ সময় তিনি বলেন, ভোটের সুষ্ঠু কোনো পরিবেশ নেই। নৌকার লোকজন জোর করে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করছেন। ভোটাররা ইভিএমে আঙুল দেওয়ার পর নৌকার লোকজনই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন।

এদিকে দেবগ্রাম শাহ সুলতান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর পদে ভোট কারচুরির অভিযোগ এনে বেলা দুইটার দিকে আখাউড়া পৌর শহর এলাকায় হাতে লাঠি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকার লোকজন।

আখাউড়া পৌরসভায় ১১টি কেন্দ্রের সব কটিতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ চলছে। সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এখানে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন নৌকা প্রতীকে বর্তমান মেয়র তাকজিল খলিফা, ধানের শীষে জয়নাল আবেদীন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হক ভূঁইয়া (নারকেলগাছ) ও যুবলীগ কর্মী শফিকুল ইসলাম খান (মোবাইল ফোন)। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।