আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ১৯ জন রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঠাকুরগাঁও সদরের সেনপাড়ার সুমিত্রা রানীমঈনুল ইসলাম

কনকনে শীতে রংপুরে আগুন পোহাতে গিয়ে গত এক সপ্তাহে দগ্ধ হয়ে ১৯ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। আর দগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সুমিতা রানীর (৬০) বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া গ্রামে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেল, প্রচণ্ড শীতে গত রোববার পাশের বাড়ির উঠোনে আগুন পোহাতে যান সুমিতা। এ সময় তাঁর পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। তাৎক্ষণিক আগুন নেভানো হলেও শরীরের অনেকটা অংশ পুড়ে যায় তাঁর। তাঁকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর কোমরের নিচ থেকে পুরো অংশ আগুনে দগ্ধ হয়েছে।

হাসপাতালে সুমিতার সঙ্গে থাকা ছেলের বউ বীণা রানী বলেন, ‘কী যে হবে জানি না। মায়ের শরীর ঝলসে গেছে। নড়াচড়া করতে পারেন না। এসব দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’

হাসপাতালে আছেন একই জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার রমেছা বেগম (৫৫)। তিনি নির্মাণশ্রমিক। গত শুক্রবার নির্মাণকাজের পর খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। নিজের শরীরের আগুন নেভাতে গিয়ে দুই হাত ও পিঠ দগ্ধ হয়েছে তাঁর। এরপর তাঁকে দ্রুত ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা ছোট বোন ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আগুনে ঝলসে যাওয়া বোন যন্ত্রণায় সারা রাত ঘুমাতে পারেন না। খালি ছটফট করেন। তাঁর কষ্ট-যন্ত্রণা দেখে চোখের পানি আটকাতে পারি না।’
হাসপাতালের বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, প্রচণ্ড শীতে খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৯ দগ্ধ রোগী চিকিৎসাধীন।

দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রমেছা বেগম
প্রথম আলো

হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত চিকিৎসক আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে জানান, প্রতিবছরই শীত মৌসুমে আগুন পোহাতে গিয়ে হাসপাতালে আগুনে দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়। তবে তুলনামূলকভাবে এবার কিছুটা কম রোগী ভর্তি হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভর্তি হওয়া রোগীদের অবস্থা বেশ খারাপ। চিকিৎসার পর সুস্থ হলেও পুরোদমে সেরে উঠতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। শরীরের ক্ষত থেকে যাবে। এরপরও চিকিৎসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।